চিকিৎসক-নার্স সবই বিশেষায়িত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা দেয়া হবে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে। চিকিৎসার সমান্তরালে চলবে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমও। বিশেষায়িত হাসপাতালে যেসব সুযোগ-সুবিধা, তার চেয়ে অতিরিক্তই থাকবে নির্মাণ শুরুর অপেক্ষায় থাকা দেশের প্রথম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উত্তর দিকে কেবিন ব্লকের পেছনে ১২ বিঘা জমির ওপর ১৩ সেপ্টেম্বর সুপার স্পেশালাইজড এ হাসপাতালের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব আ মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হসপিটাল বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। নির্মাণ প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ উদ্বোধনের অপেক্ষা।
গতকাল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের সীমানা প্রাচীরের পর টিন দিয়ে ঘেরা খালি জায়গা। সেখানে লোহার গেট তৈরি, পয়োনিষ্কাশন লাইন নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াসহ নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। কাজ চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
সুপার স্পেশালাইজড এ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আছেন বিএসএমএমইউর সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৩১ জুলাই থেকে আগামী ৩০ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি হাসপাতালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। দুটি বেজমেন্টসহ ১৩তলা এ ভবনে এক হাজার শয্যা থাকবে। প্রথম ধাপে থাকবে ৭০০ শয্যা। পরবর্তীতে আরো ৩০০ শয্যার নির্মাণকাজ করা হবে।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, সুপার স্পেশালাইজড এ হাসপাতাল চালু হলে চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরো গতিশীল ও উন্নত হবে। রোগীরা তুলনামূলক কম ব্যয়ে দেশেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবেন। এতে রোগীদের বিদেশ গমনের প্রবণতা কমে আসবে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্যক্রমও চলবে এখানে।
বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য আলাদা বিভাগ থাকবে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে। লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিয়াস সেন্টার, অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার, ক্যান্সার সেন্টার, ম্যাটারনাল এবং চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ডেন্টাল সেন্টার, কার্ডিওভাসকুলার/নিউরোসার্জারি সেন্টার, এন্ডোক্রিইনোলজি ডায়াবেটিস সেন্টার, রেসপিরেটরি সেন্টার, জেরিয়্যাট্রিক (বয়স্কদের চিকিৎসা) সেন্টার, জয়েন্ট/স্পাইন কর্ড সেন্টার, হার্ট সেন্টার, বার্ন ইনজুরি সেন্টার, হেলথ স্ক্রিনিং সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল সেন্টার, অ্যাম্বুলেটরি সার্জারি সেন্টার ও কিডনি মেশিন সেন্টার (হিমোডায়ালাইসিস সেন্টার) এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সব ধরনের গবেষণার উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রও থাকবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে। দেশেই উন্নততর চিকিৎসাবিদ্যা নিশ্চিত করতে থাকবে চিকিৎসকদের জন্য পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ও বায়োমেডিকেল রিসার্চের সুবিধাও।
ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি সেন্টারভিত্তিক হাসপাতাল। গতানুগতিক আউটডোরের বাইরে একটা সেন্টারে গিয়ে রোগী কম্প্রিহেনসিভ সব ধরনের সেবা পাবে। রোগীর ভোগান্তিও কমবে। এখানে ১০০ শয্যার অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি থাকবে, যেখানে মেডিকেল, সার্জিক্যাল, নিউরোলজিক্যাল যেকোনো ধরনের ইমার্জেন্সি রোগী কম্প্রিহেনসিভ সেবা পাবে। রোগীদের শেষ গন্তব্য হবে এ হাসপাতাল। কোথাও কোনো চিকিৎসা না থাকলে এখানে চিকিৎসা পাবে রোগীরা।
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, কোরিয়ার হুন্দাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, বাংলাদেশ সরকার ও বিএসএমএমইউ এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বহন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
হুন্দাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার নির্মল মণ্ডল বলেন, আগস্টে কাজ শুরু হয়েছে। এখন মবিলাইজেশন চলছে। যন্ত্রপাতি চলে এসেছে, ক্ষণস্থায়ী সীমানা দেয়াল বসছে, গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি হবে বিএসএমএমইউয়ের সম্প্রসারণ। বিএসএমএমইউয়ের বিদ্যমান অতিরিক্ত জনবল দিয়ে এ হাসপাতাল পরিচালিত হবে। এর বাইরে ৩৫ শতাংশ নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর আগেই সেন্টারগুলো চালানোর জন্য চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, এ হাসপাতালের ফলে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার পরিসর বাড়বে। রোগীদের ভোগান্তি ও খরচও কমবে। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এখানে রোগ নির্ণয় করা হবে। দেশেই উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ায় রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।