রাজধানীতে তাপমাত্রা ও বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি, বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন বসন্তকাল। কিন্তু রাজধানীতে তূলনামুলক বেশি তাপমাত্রা ও বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় রাজধানীবাসী উপভোগ করতে পারছে না বসন্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢাকাজুড়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে তাপমাত্রা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ব্রঙ্কাইটিসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীবাসী। 

রাস্তায় বের হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের পানি ছিটানোর প্রক্রিয়াতেও ভালো ফলাফল পাচ্ছেন না তারা।  
 
সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এখন রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, মালিবাগ, নাবিস্কো, মহাখালী, এয়ারপোর্ট ও উত্তরা এলাকায় দেখা দেয় যানজট। ধুলাবালি থেকে বাঁচতে এসব এলাকায় চলাচলরতদের দেখা যায় সাধারণ ছাড়াও মেডিকেটেড মাস্ক পরে ঘুরতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। কিন্তু বসন্তকাল অনুসারে আদ্রতার পরিমাণ ঠিক থাকলেও তাপমাত্রার পরিমাণ আরও কম থাকার কথা বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। মূলত বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় তাপমাত্রার এ উর্ধ্বগতি বলে জানান তারা।
 
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ জরিপ মতে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪র্থ স্থানে রয়েছে। সর্বমোট ৯১টি দেশের ১ হাজার ৬০০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ২৫টি শহরের তালিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা। এই ২৫টি শহরের তালিকায় নারায়ণগঞ্জের অবস্থান ১৭তম। গাজীপুর ২১তম ও ঢাকা ২৩তম অবস্থানে রয়েছে। পুনরায় বাসের অযোগ্য শহর হিসেবে এই ২৫টি শহরকে চিহ্নিত করেছে ডব্লিউএইচও।
 
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় সাকেরুজ্জামান নামের এক পথচারী বলেন, আমার বাসা মিরপুর এলাকায়। ধুলাবালির প্রকোপে অনেক আগে থেকেই ভুক্তভোগী আমি। রাস্তায় মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েছে। আগে সাধারণ মাস্ক পরে ঘুরতাম। এখন অতিরিক্ত দাম দিয়ে হলেও মেডিকেটেড মাস্ক পরে ঘুরি। কেননা কাশির পরিমাণ বেড়েছে। তাছাড়া এখন বাইকও চালাতে পারি না। একদিন চালালেই অসুস্থ হয়ে পড়ি ধুলার কারণে।
 
এদিকে জমে উঠেছে মাস্ক ব্যাবসায়ীদের ব্যবসা। রাস্তায় বা ফুটপাতে সাধারণ মাস্ক বিক্রি হওয়া ছাড়াও দোকানগুলোতে মেডিকেটেড মাস্কের ব্যবসাও চলছে বেশ। তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টের মার্কেটে তানভীর জামান নামের এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এখানে সাধারণত বিভিন্ন হাসপাতালের লোকজন আসে। সাধারণ ক্রেতারা খুব কম আসে। কিন্তু ইদানিং বেশ আসছে শুধু মেডিকেটেড মাস্ক কেনার জন্য। কেননা সাধারণ মাস্কে অনেক সময় ধুলা ঢুকলেও এগুলোতে ঢোকে না।
 
জানা গেছে, আগে এই মাস্কগুলোর দাম ৪০ টাকা থাকলেও বর্তমানে এর দাম দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শুধু ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ার কারণেই দাম বেড়েছে এই পণ্যের।    
 
এদিকে রাজধানীতে হাইকোর্টের নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পানি ছিটানো বা রাস্তা ভিজিয়ে রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব গাড়ি থেকে দিনে ৩ থেকে ৪ বার পানি ছিটানো হলেও সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার মধ্যেই তা আবার শুকিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
 
এমন পরিস্থিতিতে ব্রঙ্কাইটিস জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কেননা রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকরি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইদানীং কাশি ও ব্রঙ্কাইটিস জাতীয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাছাড়া রোগীর চাপ অতিরিক্ত হওয়ায় রাজধানীর শ্যামলীস্থ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে চালু করা হয়েছে অ্যাজমা সেন্টার। যেখানে রোগীর চাপ দিনকে দিন বাড়ছে বলেও জানা গেছে হাসপাতাল সূত্রে। এমনকি রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ।
 
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনকোলজি বিভাগের সহযোগী চিকিৎসক ডা. সাদিয়া শারমিন বলেন, ধুলাযুক্ত বাতাস গ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এরপর রয়েছে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি। ধুলার সঙ্গে কিছু উপাদান উড়ে যেগুলো পানিতে মেশে না, যেমন- ইউরিয়া, প্যারাবিন, থ্যালেট, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস ও প্রোপাইলিন গ্লাইকল। এগুলো শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুসে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ব্রঙ্কাইটিস জাতীয় বা ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেওয়াও স্বাভাবিক।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *