তিন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসকরা। গতকাল থেকে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত হন চিকিৎসকরা। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগে থেকে সেখানে থাকা কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী হাসপাতালের আগের কমিটির কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে চিকিৎসকদের সঙ্গে অযৌক্তিক বাক-বিতণ্ডা শুরু করে।
এক পর্যায় তারা হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এস এম জাকির হোসেনের ওপর হামলা চালায়। এতে বাধা দিলে তার ড্রাইভারের মাথায় আঘাত করে তারা। এ সময় পাশে থাকা অন্য চিকিৎসকদেরও লাঞ্ছিত করে সন্ত্রাসীরা।
তারা হলেন, শিশু হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. নূর মোহাম্মদ ও ডা. আব্দুর রাজ্জাক।
এর প্রতিবাদে তিন চিকিৎসক হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ডা. এস এম জাকির হোসেন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘কোন ভুলত্রুটি ও প্রমাণ ছাড়াই চিকিৎসদের ওপর এ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে।এ ঘটনা সারাদেশের চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জেলা বিএমএর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিএমএকে লিখিতভাবে জানানো উল্লেখ করে হয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। হামলার সুষ্ঠ বিচার ও কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের সকল চিকিৎসা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। এতে সাতক্ষীরার সকল চিকিৎসক একমত প্রকাশ করেছেন।’
সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ক্ষমতা বলে জেলা প্রশাসক এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি পদাধিকার বলে কনসালটেন্ট। আর জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কমিটির সদস্য।
বিগত কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও জেলা প্রশাসনের ব্যস্ততায় নতুন নির্বাচন দেয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে আহ্বায়ক কমিটি দুই দফায় বহাল রয়েছে।
এ নিয়ে একটি মহলে মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা হাসপাতালের পরিবেশ ঘোলাটে করার জন্য নানা পাঁয়তারা শুরু করে।
এর ধারাবাহিকতায় গত দুই দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মরহুম ডা. এম আর খান ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহিউদ্দীনের আহ্বানে শিশু হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দেন ডা. এস এম জাকির হোসেন।
এ সময় হাসপাতালের তহবিল ছিল শূন্যের কোঠায়। ডা. জাকির দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসার মানোন্নয়নের পাশাপাশি বড় অংকের তহবিল গঠন করেন।
এই তহবিল আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন ব্যক্তি বহুদিন ধরে হাসপাতালে নানা সমস্যা তৈরির ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টিদের ধারণা।