যদি চান সাইক্রিয়াট্রিতে ক্যারিয়ার গড়তে

বাংলাদেশে জীবিত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা দুইশ’ এর কিছু বেশি। এর মধ্যে দেশি ডিগ্রিধারী আছেন- এফ সি পি এস, এমডি , এমফিল, ডিপিএম, এম সি পি এস। আবার বিদেশী ডিগ্রিধারী আছেন- এম আর সি সাইক, ডিপিএম৷এই ক’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের মানসিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা কোনভাবেই যে সম্ভব না তা সহজেই অনুমেয়৷

এফ সি পিএস বা এম ডি ডিগ্রিধারী চিকিৎসক বানাতে চাইলেইতো আর হয় না। ধাঁইধাঁই করে পাশ করে গেলেও ন্যূনতম পাঁচ/ ছয়টি বছর লেগে যায়। সাইকিয়াট্রিতে যে মন্থর গতিতে বিশেষজ্ঞ তৈরী হচ্ছে, তাতে কমপক্ষে আগামী পঞ্চাশ বছর লেগে যাবে পাঁচশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বানাতে। এটা একটা বাস্তব সমস্যা তুলে ধরলাম ৷

এর সমাধান:

সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন এই বিষয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করি৷ সাকিয়াট্রি জীবনের কথা বলে। এখানে জীবনের রং রস স্বাদ আহ্লাদের সহজেই দেখা মেলে৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরেও এখানে মনোবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান চর্চা হয়, যা জীবনের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় বলে আমার বিশ্বাস৷

আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই আমার একসাথে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান ও দুবছরের ডিপিএম ডিগ্রি হাতে আসে৷ সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়তে চাইলে তারা আমাকে চক্করে ফেলে দেয় ও ঠান্ডা করার জন্য কুয়েতে পাঠিয়ে দেয়৷ আমি কুয়েত থেকে ফিরেই আবার চেষ্টা চালিয়ে চাকরি ছাড়তে সক্ষম হই৷

সুযোগ হল ডিসেম্বর ২০০৩ এ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এ যোগদানের৷ তখনই আমার সাবজেক্টের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে কষ্ট হয়৷ কাউকেই দোষ দেয়া যাবে না, আমাদেরই বহন করতে হবে এই অপবাদ৷ ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে ব্যর্থতা, দুর্বল পরিকল্পনা ও স্বার্থানেষী মানসিকতা আমাদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে দেয়নি৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবৈজ্ঞানিক নীতিমালা ও পথ চলাও বহুলাংশে দ্বায়ী৷ 

অতি অল্পসংখক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে কোনভাবেই এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷ সে কারণেই নানাবিধ হতাশা আমাদের মাঝে কাজ করে৷ অন্যান্য পেশার এমনকি চিকিৎসকদের মাঝে বিশেষ করে সিনিয়রদের মাঝে সাকিয়াট্রি নিয়ে ভুল ধারণার শেষ নেই৷ আমি আমার সাবজেক্টকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে এখানে এসেছি৷ তাই এর অগ্রগতি, উন্নতি, প্রবৃদ্ধি আমার স্বপ্ন৷ যারা জীবনকে টাকা পয়সা আর লৌকিক জৌলুস দিয়ে মাপেন না, শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতি, দর্শন মনোবিজ্ঞান- সমাজবিজ্ঞানকে জীবন ধারণ ও যাপনের মৌলিক পরিচালিকা শক্তি হিসেবে মানেন তাদের জন্য এই রসালো বিষয়টি – সাকিয়াট্রি৷

রেসিডেন্সিতে ঢুকতেই সীমাহীন প্রতিযোগিতা, অনেক কষ্ট – কারণ সীমিত আসন৷ ফেলোশীপে সেই সীমাবদ্ধতা নেই৷ জানুয়ারি ২০১৯ এ সাইকিয়াট্রিতে পাশ করেছে সবচে বেশি৷ ২১ জন্যে সাতজন – ৩৩.৩৩%৷ অথচ সর্বমোট পাশের হার ৮.৪%৷ এই ক্ষেত্রে স্টুডেন্টদের কঠোর শ্রমের সাথে আমাদের কিছুটা গাইডলাইনও ছিল৷

আমি বিসিপিএসের এক্সামিনার৷ কিছু সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে বিসিপিএস পরীক্ষকদের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার প্রায়াস পেয়েছে৷ আমরা সেটা মেনে চলি অক্ষরে অক্ষরে৷ কিন্তু একই সাথে বলতেই হয় স্টুডেন্টদের আগের মতো পার্ট ওয়ানে কোন কোর্স না থাকাতে তারা প্রশিক্ষণটা পাবে কোথায়? জুনিয়রদের অনেক কষ্টের মধ্যে এটা একটা বাড়তি কষ্ট৷ এ কষ্টের উপশম আছে, সমাধান করা সম্ভব৷

যারা সাইকিয়াট্রিতে ফেলোশিপ করতে চাও বা রেসিডেন্সিতে চাঞ্চ নিতে চাও অতি স্বত্তর যোগাযোগ করতে পারো৷ কোন শর্ট কাট পথে না- সহীহ পথেই প্রয়োজনীয় জিনিস জেনে শুনেই পাশ করবে৷

এই দুস্টু ছেলে, তুমিও করবে। এই আলসে মেয়ে, তুমিই হবে রেসিডেন্সিতে প্রথম। এই সাপ্লির ডিব্বা, তুমিই এক চাঞ্চে করবে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পাশ৷ এই অধিক মার্কশিটের সত্ত্বাধিকারিনী, তুমি কেন বিশ্বাস করছো না – পালসের লিস্টের প্রথম দিকের ওটাতো তোমারই নাম? শুরু করে দাও, সময় খুব কম৷ আত্মবিশ্বাসী হও, শক্তি যোগাও৷ দুই নৌকায় পা দেয়া যাবে না ৷

ক. যারা রেসিডেন্সিতে যেতে চাও সেই কেন্দ্রীক পাঠ চুকাও৷ একজন চান্স পেলে তুমিই হবে সেজন, এই হোক বিশ্বাসের প্রাণশক্তি ৷

খ. যারা এফসিপিএস পার্ট ওয়ান দেবে, তারা বিসিপিএস এর সিলেবাস অনুসরণ করবে৷ যেহেতু এখানে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন নেই, একটা মানে পৌঁছলে ত্রিশ জনের ২৮ জন পাশ করলেও বিসিপিএস তাদের ফল প্রকাশে বাধ্য যা অতীতে হয়েছে৷

রেসিডেন্সিতে যেখানে বছরে একবার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ এফসিপিএস পার্ট ওয়ান দেয়া যাবে সেখানে দুবার৷ জানুয়ারি ও জুলাই৷ গাইড দেয়ার জন্য আমি আগের মতো শ্রম ও সময় দেব, কিন্তু তোমাদের সেটা নেয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তা থাকতে হবে৷

মনে রাখার বিষয়: মেধা নয় দৃঢ় ইচ্ছে থাকলেই “পোস্ট গ্রাডুয়েশন” হয়৷

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *