শরীরে প্রধানত দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। এরা হলো লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) এবং হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল)। এলডিএল রক্তনালিতে জমাট বেঁধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এজন্য একে খারাপ কোলেস্টেরল বলে। অন্যদিকে এইচডিএল বিভিন্ন জায়গার এলডিএলকে ধরে নিয়ে যকৃতে পাঠিয়ে দিয়ে সহায়তা করে বলে তাকে উপকারী কোলেস্টেরল বলে। এদের বাইরে আমাদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড নামের এক ধরনের চর্বি আছে, যা খাবারের অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। বেশিমাত্রার ট্রাইগ্লিলাসারাইড রক্তনালি শক্ত হওয়ার পেছনে সরাসরি দায়ী।
কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ
অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক পরিশ্রম না করা, ধূমপান করা এবং ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার (রুটি/সেমাই/পিঠা/চিনিযুক্ত খাবার/ পায়েস প্রভৃতি) বেশি খাওয়ার কারণে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় খাবার যেমন- লাল মাংস, কলিজা, তৈলাক্ত/ভাজা-পোড়া খাবার, আইসক্রিম, বিভিন্ন প্রকার ফাস্টফুড (স্যান্ডুইচ, বার্গার, চিকেন গ্রিল/ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই), ঘি/চর্বিতে ভাজা খাবার প্রভৃতি কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। ডিমের ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
তবে এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম (পূর্ণাভা ওমেগা-৩ ডিম) খাওয়া যেতে পারে। ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার এইচডিএল বাড়াতে এবং এলডিএল কমাতে সহায়তা করে।
শুধু পারিপার্শ্বিক কারণেই নয়, বংশগত কারণেও শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য হতে পারে, যাকে ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে। শুধু বাবা কিংবা মা থেকে এ জিন পেলে তাকে হেটারোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া এবং বাবা-মা উভয়ের কাছ থেকে এ জিন পেলে তাকে হোমোজাইগাস হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে। এ ধরনের কোলেস্টেরল আধিক্যের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কারণ খাবার বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
শরীরে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের স্বাভাবিক মাত্রা
টোটাল কোলেস্টেরল বলতে সাধারণত এইচডিএল, এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের ০.২ গুণের সমষ্টিকে বোঝায় অর্থাৎ টোটাল কোলেস্টেরল = এইচডিএল + এলডিএল + ০.২ ট্রাইগ্লিসারাইড। টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা ৬.২ মিলি মোল/লিটারের নিচে হওয়া ভালো তবে ২৪০মিগ্রা/ডেসিলিটার বা ৬.২ মিলিমোল/ লিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ৬০মিগ্রা/ ডেসিলিটার বা ১.৬ মিলিমোল/লিটারের চেয়ে বেশি হওয়া আবশ্যক আর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০০ মিগ্রা/ ডেসিলিটার বা ২.৬ মিলিমোল/লিটারের চাইতে কম হতে হবে। আদর্শ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০মিগ্রা/ডেসিলিটার বা ১.৭ মিলিমোল/লিটারের নিচে হওয়া প্রয়োজন।
কোলেস্টেরল প্রতিরোধে
কাঠবাদাম, শাকসবজি, আঁশ জাতীয় খাবার, তাজা ফলমূল, বাঁধাকপি, মুলা, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ, গ্রিন টি (চিনি ছাড়া), শিম, রসুন, পিঁয়াজ, জলপাইয়ের তেল প্রভৃতি। এর পাশাপাশি দৈনিক অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি/শারীরিক ভারী শ্রম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে কোলেস্টেরলের আধিক্যের সম্ভাব্য ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা, পরিমাণমতো শারীরিক পরিশ্রম করা এবং নির্দিষ্ট বিরতিতে চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন।