রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল গবেষক। যে প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন রোগীর দেহে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতির প্রবেশ ছাড়াই ক্যান্সার আছে কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই প্রযুক্তি বলে দেবে কোনো ব্যক্তির শরীরে ক্যান্সার আছে কি নেই। এতে খরচ পড়বে ৫শ টাকারও কম। আগামী এক বছরের মধ্যে মানুষ এই প্রযুক্তির সুফল পাবে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি খবর। এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের গবেষকরা অসাধ্য সাধন করেছেন। এই জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য।
নানা ধরনের ক্যান্সারে আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। মৃত্যুহার বিবেচনায় তা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ রোগ যথাসময়ে শনাক্ত না হওয়া। সাধারণত বেশিরভাগ ক্যান্সার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে চিকিৎসা না হলে পরের ধাপে তা আর নিরাময়যোগ্য থাকে না। বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৬ সালের মার্চে ‘নন-লিনিয়ার অপটিক্স ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এ কাজে অর্থায়ন করে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ)। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধীনে হেকেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শাবিপ্রবির ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার সূচক পরিমাপ করে নতুন এ প্রযুক্তিতে ক্যান্সার শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়। বায়ো কেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় যে বাড়তি রিএজেন্ট ব্যবহার করতে হয় উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে তা প্রয়োজন হয় না। এ পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে নতুন একটি পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ক্যান্সারের ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। এটি অল্প খরচে এবং কম সময়ে করা সম্ভব হবে। এ উদ্ভাবনী প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্ত নয়, অন্য যে কোনো স্যাম্পলের নন-লিনিয়ার ধর্ম খুবই সহজে সূ²ভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে। ‘নন-লিনিয়ার অপটিক্যাল ধর্ম ব্যবহার করে ক্যান্সার রোগীর শরীরের তরল পদার্থের মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি’ নামের এ প্রযুক্তির মেধাস্বত্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। আমাদের দেশে রয়েছেন অনেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ও গবেষক। ইতোপূর্বে পাটের জন্ম রহস্যসহ আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা। ধানের নতুন নতুন উন্নততর জাত আবিষ্কারের গবেষণা সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। অন্যান্য ফল, ফসল ও মাছের গবেষণায়ও বাংলাদেশের অনেক সুনাম রয়েছে। ক্যান্সারকে বলা হয় মরণব্যাধি। চিকিৎসকরা বলে থাকেন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুফল পেতে হলে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে তথা দ্রুত শনাক্ত হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ক্যান্সার চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গবেষণা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে, সেই গবেষক দলের সব সদস্যের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের এই আবিষ্কার আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।