গরমের এই সময়ে রাস্তা-ঘাটে সহজেই দেখা মেলে লেবুর শরবত কিংবা আখের রস; তরমুজের-আনারসসহ নানা ফলের রসও বিক্রি হয়।
পথের এসব শরবতের দোকানে ভিড়ও লেগে থাকে প্রায় সারাক্ষণ। কিন্তু এসব শরবত তৈরির প্রক্রিয়া যে অস্বাস্থ্যকর ও দেহের জন্য ক্ষতিকর তা তাদের অনেকেই জানেন না।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে এরকম শরবত বিক্রি হয়; সবখানের চিত্র একই রকম।
ঢাকাসহ এসব জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, শরবতের রঙ সুন্দর করার জন্য দেওয়া হয় অস্বাস্থ্যকর রং এবং স্বাদে মিষ্টি করার জন্য ঢালা হয় স্যাকারিন, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি। আর যেসব ফল থেকে এসব পানীয় তৈরি হচ্ছে, তা বেশিরভাগ সময়ই খোলাভাবে রেখে দেওয়া হয়। এর ওপর অনবরত পড়তে থাকে ধুলো-বালি, চলে মশা-মাছির ওড়া-উড়ি। শরবতে যে পানি বা বরফ ব্যবহার হয় তা থাকে অপরিশোধিত। অনেক সময় ফলগুলো ধোয়া হয় নোংরা পানিতে; আর বিক্রেতারা পরিবেশন করেন নোংরা হাতে।
এরকম শরবত পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেমন?
চিকিৎসকরা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানের শরবত পানে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। হেপাটাইটিস বি-ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ফলের রস নিয়ে সমস্যা না থাকলেও এখানে সমস্যা প্রক্রিয়াটি নিয়ে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের প্রধান ডা. মোহা. হারুণ-আর-রশীদ বলেন, আখের রস খুবই একটি উপকারী খাদ্য এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রাস্তা ঘাটে যেভাবে আখের রসের প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তা খুবই দূষিত অবস্থায় হয়।
তিনি বলেন, “যে মানুষটি এই রস তৈরি করে তারা বেশিরভাগ সময় অপরিষ্কার থাকে। মাঝে মাঝে গরমে সে ঘেমে যায়, এবং ঘাম সেই রসের উপরে পড়ে। যে মগে বা গ্লাসে খাওয়াচ্ছে সে পাত্রে হাজারো মানুষ খাচ্ছে, এটাও ঠিক নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা এটা মিষ্টি জাতীয় খাবার তাই সবসময় হাজারো মাছি তার উপড়ে এসে পড়ছে। এটা পান করলে নানা রোগ বাসা বাঁধবে আমাদের শরীরে।”
শরবতে মেশানো রঙের বিষয়ে তিনি বলেন, “এ রঙের মাঝে কারসিনওজেন থাকে, যা খেলে ভবিষ্যতে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে। সুতরাং এসব শরবত মানুষকে বর্জন করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে খোলা ভ্যানে লেবুর শরবত বিক্রি করছিলেন লোকমান মিয়া। হেলথ নেউজের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন শরবতের পানি সরাসরি ওয়াসার পানি থেকে সংগ্রহ করে পানির ফিল্টারে দিয়েছেন তিনি।
প্রচণ্ড গরমে চিনি, বিট লবণ দিয়ে বানানো এক গ্লাস লেবুর শরবত ১০ টাকায় কিনে খেলেন রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী তাসনিম তামান্না।
অস্বাস্থ্যকর শরবতের প্রসঙ্গটি তুললে হেলথ নিউজকে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কোন কিছুর চিন্তা না করেই খেয়ে নিয়েছি।”
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশনের অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী হেলথ নিউজকে বলেন, “কোন অবস্থায় এই গরমে রাস্তার পাশের এসব শরবত খাওয়া উচিত না। কারণ এদের পানির ফিল্টার, বরফ, পানি কোনটাই পরিচ্ছন্ন না। এতে জন্ডিস, টাইফয়েড মত পানিবাহিত রোগ হতে পারে।”
গরমে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় সাথে পানির বোতলে শরবত বা পানি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, “অপরিচ্ছন্ন হাত ও গ্লাসে পরিবেশিতে এসব শরবত পানে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”