অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার!

দেশে বৈধ লাইসেন্সে মাত্র ৬ হাজার ৮৬৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সেন্টারের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। শুধু রাজধানীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা সাত শতাধিক। কিন্তু বাস্তবে রাজধানীতে রয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কাঁচামাল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাছ ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বনে গেছে। তাদের কাছে আধুনিক চিকিৎসাসেবার কোন গুরুত্ব নেই, আছে শুধু লাভের ফন্দিফিকির। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে বিশদ চিত্র উঠে এসেছেÑ যা পড়লে শিউরে উঠতে হয়।

গোটা দেশের সরকারী হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো মহা অরাজকতার নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। সরকারী হাসপাতাল থেকে তাদের নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসার ট্র্যাডিশন চলছে সমানে। কে দেবে তাদের বাধা, কে করবে রোগী ও স্বজনদের উদ্ধার? চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসা, জালিয়াতি, প্রতারণা সবই চলছে। ভেতর থেকে দেখলে স্পষ্ট হবে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা সাধারণের পকেট থেকে। কোথাও কারও কোন জবাবদিহি নেই। চিকিৎসক ও অবৈধদের অনৈতিক ব্যবসায় ভাগাভাগির এক অংশ নিয়মিত পায় স্বাস্থ্য প্রশাসন। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং দালালরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আয়কর বিভাগ বা দুদক এসবের হদিস রাখে না বলেই তারা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। দালালচক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করে সরকারী হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী। বিত্তবানরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সেই উপায় নেই। এই অব্যবস্থার কারণে দুর্নামের শিকার হচ্ছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দালাল চক্র এবং তার দোসররা যে অবস্থানে নিয়ে গেছে, তাদের দমন করে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। বার বার ঘোষণা দিয়েও দেশব্যাপী কার্যকর অভিযান অব্যাহত রাখতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই সব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার লালন পালন করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। র‌্যাবের অভিযান প্রশংসিত হলেও ঘন ঘন অভিযান আছে তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে দেশজুড়ে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ সেন্টারের নেই সরকারী অনুমোদন। কোথাও কোথাও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে সাজিয়ে বসেছে হাসপাতাল ব্যবসা। ভর্তি করা হয় রোগী। ভাড়া করে আনা হয় চিকিৎসক। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নানা হয়রানির শিকার হয়ে আসছে অনেক রোগী ও স্বজন।

সাইনবোর্ডসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই। হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগের পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম নিয়মিত ও জোরালো করতে হবে। অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে, ভবিষ্যতকে বিপদমুক্ত রাখতে হলে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। সূত্র জনকণ্ঠ

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *