থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে মুখে খাওয়ার বড়ি লেভোথাইরক্সিনের মাধ্যমে হরমোনের ঘাটতি পূরণ করা হয়। তবে থাইরয়েড হরমোন বা লেভোথাইরক্সিন খাওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। অনেক সময় ভুল পদ্ধতির কারণে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না।

আপনার করণীয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধটি সারা জীবন ধরে খেয়ে যেতে হয়। তাই পরীক্ষায় হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেও ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। মাত্রা বেশি কমে বা বেড়ে গেলে ওষুধের ডোজ ঠিক করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লেভোথাইরক্সিন পাওয়া যায়। যেহেতু সারা জীবন খেতে হবে, তাই একটি ভালো ব্র্যান্ডের ওষুধ বেছে নেওয়া উচিত। হুট করে ওষুধের ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা উচিত নয়।

* এ বড়ি ছোট কৌটায় বা পাতায় পাওয়া যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ বা রং নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধ খাবেন না। ওষুধটি খুবই সংবেদনশীল। তাই সংরক্ষণের জন্য ঘরের ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গা বেছে নিন। স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ওষুধ রাখবেন না।

* লেভোথাইরক্সিন খালি পেটে সেবন করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওষুধটি খেয়ে নেওয়া ভালো। ওষুধ খাওয়ার সময় থেকে সকালের নাশতার ব্যবধান অন্তত এক ঘণ্টা হওয়া উচিত। রাতে ওষুধটি খেতে চাইলে খাবারের অন্তত তিন ঘণ্টা পর তা খেতে হবে।

* ওষুধ খাওয়ার আগে হাত শুকিয়ে নিন। সম্ভব হলে হাত দিয়ে স্পর্শ না করেই ওষুধের কৌটা বা পাতা থেকে সরাসরি মুখে দিন।

* এ ওষুধ সেবনরত অবস্থায় আলাদা কোনো খাদ্যতালিকা নেই। ফুলকপি, বাঁধাকপি বা সয়াপ্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারবেন।

* ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ মানের আমিষযুক্ত খাবার, সয়াপ্রোটিন, ফাইবারযুক্ত খাবার, অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত নয়। এতে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। ওষুধ সেবনের পরবর্তী চার ঘণ্টার মধ্যে ক্যালসিয়াম বা আয়রন সেবন করাও ঠিক নয়।

* গর্ভকালেও ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। এতে গর্ভবতী মা ও  অনাগত সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। বরং গর্ভাবস্থায় ওষুধের মাত্রা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ামাত্র চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি হলে প্রতিদিন যে মাত্রায় ওষুধটি খাচ্ছেন, সপ্তাহে দুই দিন তার দ্বিগুণ মাত্রায় ওষুধটি খান।

* কোনো কারণে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে মনে পড়ামাত্র খেয়ে নিন। তবে অবশ্যই খালি পেটে (খাওয়ার অন্তত এক-দুই ঘণ্টা আগে বা পরে হতে হবে) খেতে হবে। কোনো দিন ওষুধ খাওয়া না হলে পরদিন একবারে দুই দিনের ডোজ খেয়ে নিতে পারেন।

* ওষুধের মাত্রা ঠিক আছে কি না, জানতে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্তে হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করুন।
ডা. এ বি এম কামরুল হাসান, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ 

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *