কোনো রোগী মারা গেলেই চিকিৎসককে দোষ দেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, একজন মানুষের শরীরে নানাবিধ জটিলতা থাকতে পারে, বয়স্ক রোগীদের তো এমনিতেই মৃত্যুঝুঁকি থাকেন। স্ট্রোকের রোগী, হার্টের রোগী, কিডনি ডেমেজের রোগী, লিভারের রোগী তো মারা যেতেও পারে। আর মানুষ তো মারা যাবেই।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাত ৯টায় মুজাহিদ শুভর উপস্থাপনায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির অনলাইনের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত আয়োজন ‘বদ্যিবাড়ি’ ১০০তম পর্বের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শততম পর্বের বিষয় ছিল ‘গণমাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত’। আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌফিক মারুফ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনায় সতর্কতার সঙ্গে রিপোর্ট বা সংবাদ তৈরি করা উচিত। হঠাৎ করে কেউ মারা গেলে ভুল চিকিৎসা বলা উচিত নয়। একজন রোগী মনে করেন আইসিউতে আছে, ওখানে থাকা মানেই তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি যেকোনো সময় মারা যেতেই পারেন।
কোনো রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের অভিযুক্ত করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না করতে জনসাধারণের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান একুশে পদকপ্রাপ্ত এ চিকিৎসক।
ডেঙ্গু সচেতনতায় সাংবাদিকদের ভূয়সী প্রশংসা করে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এটি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এ বছর ডেঙ্গুর যে ভয়াবহ অবস্থাটা গেছে, আমি খেয়াল করেছি গণমাধ্যম যেভাবে তারা বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করেছে, বলতে পারেন (মানুষকে সচেতন করতে) একদম উঠেপড়ে লেগেছিল। দিনরাত পত্রপত্রিকা-টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়ায় যেভাবে কভারেজ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিধনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনই সিটি কর্পোরেশন বা অন্যান্য বিভিন্ন যারা আছে তাদেরও তো ভূমিকা কম নয়। গণমাধ্যম যদি তুলে না ধরতো তাহলে আমরাও যেমন সচেতন হতাম না, আমি আমার ঘরবাড়ি কী করবো না করব তা তো অনেকে জানি না। অথবা, জানি করি না। এক্ষেত্রে ঢিলেঢালা তো হয়। কিন্তু ঘরের বাইরে যে কাজ সেটা তো প্রশাসনের কাজ। সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য যে সংস্থা আছে তাদেরও তো কাজ। গণমাধ্যমের ভূমিকার জন্যই প্রশাসন কিন্তু এক্টিভ ভূমিকা পালন করেছে। যার কারণে ডেঙ্গু পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও কমিয়ে তো আনা গেছে।
তিনি বলেন, এবার তো মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তারা যদি অগ্রণী ভূমিকা না নিত তাহলে হয়তো মৃত্যুর হার অনেক বেশি হতো।
চিকিৎসকদের সম্পর্কে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের চিকিৎসকদেরও অনেক দোষত্রুটি আছে। রোগীদের আসল অভিযোগ কী? ডাক্তারের কাছে গেলাম, ডাক্তার কথাই শুনলো না। ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলো না। দেখলই না। কথা বলতে বলতে প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলল। এটা তো অসত্য না। এটা তো হচ্ছে। আবার রোগীরা এটাও বলে যে, গেলেই এক গাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখে দিল। যার অর্ধেক হয়তো দরকারই নাই। এগুলো তো সত্য। হচ্ছে তো। কেউ কেউ হয়তো করি আমরা। ডাক্তার পার্সেন্টেজ খায় এটা তো অস্বীকার করার উপায় নাই।
তিনি বলেন, মানুষের মাঝে একটা কথা চালু আছে-ওষুধ কোম্পানি থেকে পার্সেন্টেজ খায়, ল্যাবরেটরিজ থেকে পার্সেন্টেজ খায়। কিন্তু সবাই তো ঢালাওভাবে এসব কাজে জড়িত নন।
স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ধরুন আমি একটা হসপিটালে আছি, মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর, আমার কাজ কিন্তু রোগী দেখা। রোগীটা যেন ভালো করে দেখি-সেটা কিন্তু আমার কাজ। কিন্তু হাসপাতালে অনেক অব্যবস্থাপনা আছে, ওষুধ নাই, বিছানাপত্র ঠিক নাই। এগুলোর দোষও কিন্তু ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটা অঘটন ঘটলেই ডাক্তারকে মারধর, ভাঙচুর হলো এটাও কিন্তু ঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর ‘বদ্যিবাড়ি’ অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। এই দুই বছরে ‘বদ্যিবাড়ি’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন দেশের খ্যাতনামা সব চিকিৎসক। সময় টেলিভিশনের তথ্য প্রযুক্তি ও সম্প্রচার বিভাগের প্রধান সালাউদ্দিন সেলিমের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও স্বাস্থ্য বিষয়ক স্টাফ রিপোর্টার মুজাহিদ শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি ১০০ পর্ব পূরণ করেছে।
অনলাইন ভিত্তিক এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দর্শকরা ফোন কল এবং কমেন্টের মাধ্যমে প্রশ্ন করে সরাসরি তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে থাকেন।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার রাত ৮টায় এ অনুষ্ঠান সময় অনলাইনের ফেসবুক লাইভে প্রচারিত হয়। ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট, লিভারসহ নানা রোগের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা হয় এ স্বাস্থ্যবিষয়ক এ অনুষ্ঠানে।