তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেছেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগরিককে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিমার বিকল্প নেই।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটর (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, দেশে ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরনের জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেই সরকারের এ উদ্যোগ। তবু দেশের অনেক মানুষ আছে যারা বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ নিয়েও হাসপাতালে যায় না তাদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেশের তিনটি জেলায় স্বাস্থ্য বিমা চালুর জন্য পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি। তবু সরকার নতুন করে চেষ্টা করছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ভায়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ কারণে চোখ, হার্ট, কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেতন হয়ে এ ভয়াবহতা রুখতে হবে। স্কুল কলেজে খেলার মাঠ রাখতে হবে। যাতে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যায়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ৭১ ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের যৌথ সহযোগিতায় সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ৭১ ফাউন্ডেশন সভাপতি ডা. খালেদ শওকত আলী।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ, পবার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবাহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেলিন চৌধুরী, ডা. জেবুন নাহার প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, রোগীদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে খুব সচেতন থাকতে হবে। রোগীর পাশাপাশি রোগীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ডাক্তার ও নার্সসহ সবার এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন বক্তরা।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটা, শরীরকে সচল রাখা ও ডাক্তারের পরামর্শ মতে ওষুধ, ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে।
বক্তারা জানান, বাংলাদেশে ২০ শতাংশেও কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলো অতি অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর ফলে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিস রোগী ছিল ১১ কোটি। ২০০০ সালে ১৭ কোটি। বর্তমানে এ রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০৩০ সালে এ রোগী দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। প্রতিবছর এক লাখ করে এ রোগী বাড়ছে। এ রোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশেও এ রোগ ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। একই সঙ্গে ডায়াবেটিসজনিত সমস্যার করণে অন্যান্য রোগের বিস্তার ও জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে।