রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়োগ পেলেন ২০০ জন মেডিক্যাল অফিসার (চিকিৎসক)। নিয়োগের দাবিতে নিয়োগ প্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর পর সম্পন্ন হলো এ নিয়োগ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিএসএমএমইউতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮০ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ২০ জন মেডিক্যাল অফিসারসহ (ডেন্টাল সার্জন) মোট ২০০ জন মেডিক্যাল অফিসারের হাতে স্ব স্ব নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের নাম মানুষ অনেক শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সেবা করার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে আপনারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশের অনেক দুঃখী মানুষ আছে যারা সেবা পায় না। তাদের দিকে একটু বিশেষ নজর দেবেন। কেন না সেবাই হলো শ্রেষ্ঠ ইবাদত। একজন ডাক্তারের কাছে মানুষের জন্ম হয়। আবার ডাক্তারের কাছে মৃত্যুও হয়। স্বাস্থ্যখাতে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এ নব্য চিকিৎসকরা আরও দৃঢ় ভূমিকা পালন করবেন বলে আমি আশা করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাকে অপমানও হতে হয়েছে। আমার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লেখা হয়েছে আমি ঘুষ গ্রহণ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমার নামের যত অভিযোগ তা আজ পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে মেধাবী চিকিৎসকরাই এখানে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রথমত চিকিৎসা পেশা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এছাড়া এটি দেশ সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানেই কোনো ধরনের দুর্নীতি চলতে পারবে না। যার কারণে রোগীরা বিপদে পড়তে পারেন।
উল্লেখ্য, ডেন্টাল সার্জনসহ ২০০ মেডিক্যাল অফিসার নিয়াগের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন ৮ হাজার ৭৯১ জন চিকিৎসক আবেদন করেন কিন্তু ত্রুটি সংক্রান্ত কারণে ২৩৪টি আবেদন বাতিল হওয়ায় বৈধ আবেদন হয় ৮ হাজার ৫৫৭টি। সে সময় নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলায় এ কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। আর এর মধ্যে মেডিক্যাল অফিসার ৭ হাজার ২৪৪টি এবং ডেন্টাল সার্জারি এক হাজার ৩১৩টি। চলতি বছরের ২২ মার্চ ২০০ জন মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। এরপর গত ১২ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মেডিক্যাল অফিসার ৭৩৯ জন এবং মেডিক্যাল অফিসার (ডেন্টাল সার্জারি) ৮১ জনসহ মোট ৮২০ জন উত্তীর্ণ হয়। চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হয় হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত করা হয় ও গত ২ নভেম্বর তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটির অনুমোদন পায় এবং ৩ নভেম্বর তা প্রকাশ করা হয় এবং ৬ নভেম্বর (বুধবার) লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের মধ্যে তাদের নিয়োগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয়।