সোরিয়াসিস ত্বকের একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা; তবে নিরাময়যোগ্য নয়। জীবনব্যাপী এ রোগ মোকাবিলা করতে হয়। কখনো কখনো সোরিয়াসিসে ত্বকের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয় অস্থিসন্ধির সমস্যাও।
সোরিয়াসিসের লক্ষণ
সাধারণত শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকে, বিশেষ করে হাঁটু, কনুই, পিঠ ইত্যাদিতে লালচে ছোপ পড়ে, যার ওপর আবার রুপালি বা সাদা খসখসে মাছের আঁশের মতো পরিবর্তন দেখা দেয়। একে বলে সিলভার স্কেল। সচরাচর এসব জায়গা তেমন চুলকায় না। কারও কারও হাত–পায়ের তালু ও মাথার ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। মাথার ত্বকে সোরিয়াসিস হলে অনেক সময় তা খুশকি বলে ভুল হতে পারে। সোরিয়াসিসে বংশগত বা পারিবারিক ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ত্বকের পরিবর্তন দেখে রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হন।
সতর্কতা কী
সোরিয়াসিস হলে তা পুরোপুরি সেরে যায় না। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিছু কিছু বিষয় যেমন কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, উদ্বেগ বা স্ট্রেস, ত্বকে কোনো আঘাত বা কাটা–ছেঁড়া এ রোগের তীব্রতা বাড়াতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শীতকালে এ সমস্যার তীব্রতা বাড়ে। নারীদের গর্ভকালীন তীব্রতা বাড়তে পারে। সোরিয়াসিসের সঙ্গে অস্থিসন্ধির ব্যথা বা গিরায় সমস্যা হতে পারে। একে বলে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস। এর জন্য চিকিৎসা দরকার হয়। ত্বকের ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তবে এ হার খুবই কম।
চিকিৎসা
সোরিয়াসিসের নানা ধরনের চিকিৎসা আছে। রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন অয়েন্টমেন্ট, ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তীব্রতা অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধ দরকার হয়। বর্তমানে বায়োলজিক ওষুধের মতো আধুনিক চিকিৎসাও সুলভ হয়েছে। ফটোথেরাপিও দেওয়া হয়।
সোরিয়াসিস রোগীদের অনেকেই হতাশায় ভোগেন, বিব্রত থাকেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি জীবনব্যাপী রোগ হলেও যথাযথ চিকিৎসা ও নিয়মিত নজরদারিতে ভালো থাকা যায়। বাংলাদেশে সোরিয়াসিস অ্যাওয়ারনেস ক্লাব এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
ডা. মো. আসিফুজ্জামান
সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল