চলছে সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি কার্যক্রম। এরপর শুরু হবে বেসরকারী কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া। গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার ফল। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৪১৩ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে পরীক্ষার্থী ২২ হাজার ৮৮২ ও মেয়ে পরীক্ষার্থী ২৬ হাজার ৫৩১। জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বরধারীরা সরকারী ৩৬ মেডিক্যাল কলেজে এবং পরবর্তীতে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এ বছর ৩৬টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে চার হাজার ৬৮ আসন ও ৭০টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ছয় হাজার ৩৩৬ আসনসহ ১০ হাজার ৪০৪টি আসনের বিপরীতে ৬৯ হাজার ৪১০ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
গরিব পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ হেলাল উদ্দিন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানাধীন গোবরাকুড়া গ্রামে তার বাড়ি। গত বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারী মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পাননি তিনি। সরকারী মেডিক্যাল কলেজের মেধাস্কোর যেখানে শেষ তা থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না হেলাল উদ্দিনের মেধাস্কোর। দেশের প্রথম শ্রেণীর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার মেধাস্কোর ছিল তার। কিন্তু উচ্চ ভর্তি ও আনুষঙ্গিক ফি মেটাতে না পেরে তিনি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। তার জায়গা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের উচ্চ ফি যোগান দিতে না পেরে প্রতিবছর দরিদ্র পরিবারের সব মেধাবীমুখ মেডিক্যাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এভাবে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ মানেই ধনী পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর জন্য উচ্চ ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সরকার নির্ধারিত ফি অনুযায়ী বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীর এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করতে মোট খরচ হবে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই ফি জোগান দেয়াটাই অনেক শিক্ষার্থীর সামর্থ্যরে বাইরে। তার মধ্যে সরকার নির্ধারিত এই ফি মেনে চলে না অধিকাংশ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ। একজন শিক্ষার্থীর এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাগে বলে অভিযোগ করেছেন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
বেসরকারী কলেজের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ॥ দীর্ঘ সমালোচনা ও আলোচনার পর গত বছর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করে। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়তি অর্থগ্রহণ ঠেকাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো ভর্তি ফি বাবদ ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিতে পারবে। ইন্টার্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাঁচ বছরে মোট টিউশন ফি বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে ফি নির্ধারণ করে দেয়ার ফলে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীর এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করতে মোট খরচ হবে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
নির্ধারিত ফি’র দ্বিগুণ খরচ ॥ এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবছরের মতো এবারও ভর্তি ফি’র বিষয়টি আলোচনায় চলে এসেছে। গতবছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শুধু ভর্তি ফি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অনেক কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক শিক্ষার্থীকে দিতে হয়েছে বাড়তি টাকা। যা কাগজে-কলমে লিখিত থাকে না। প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে অনেক শিক্ষার্থী গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি ভর্তি ফি নিয়ে এবারও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন অনেক মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। গত সেশনের অভিজ্ঞতা তাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর নিজেদের মতো করে বাড়তি ভর্তি ও কোর্স ফি আদায় করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ আসছে। বিগত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি, উন্নয়ন ব্যয়, বিধিসহ নামী-বেনামী অনেক খাতের অজুহাত দেখিয়ে চড়া ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা নিয়মের বিষয়টি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত জানান, একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা খুবই ব্যয়বহুল। ভারতে প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি কলেজে ভর্তি ফি হিসেবে শিক্ষার্থী প্রতি এক কোটি টাকাও নেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি দাবি করেন।