মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার যক্ষা রোগীদের জন্য নির্মিত একমাত্র টিবি ক্লিনিকটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। দুই জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্লিনিকটির বর্তমানে বেহাল দশা। ১৭ পদের মধ্যে ১৪ পদই শূন্য রয়েছে। একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৬ সালে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের দুই জেলার যক্ষা রোগীদের জন্য মাদারীপুর শহরের সৈদারবালী এলাকায় ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরনো এই চিকিৎসাকেন্দ্রে লোকবল বাড়েনি দীর্ঘদিনেও। ক্লিনিকে চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৭টি পদ থাকলে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। একজন চিকিৎসক, একজন ড্রাইভার ও একজন ঝাড়–দার দিয়েই চলছে এই ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। আরো ৫ জন কর্মচারীর পোস্টিং এই ক্লিনিকে হলেও এরা ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত। ফলে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বিপুলসংখ্যক রোগীর জন্য নির্মিত এই ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
কার্যত একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়েই চলছে এই ক্লিনিকের চিকিৎসা কার্যক্রম। জুনিয়র কনসালটেন্ট বক্ষব্যাধি একজন ডাক্তারের পদ ২০১৬ সাল থেকে শ‚ন্য রয়েছে। ক্লিনিকে এক ড্রাইভার থাকলেও নেই কোনো গাড়ি। ক্লিনিকের এক্স-রে মেশিন নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। নেই এক্স-রে টেকনিশিয়ানও। যক্ষার রোগীদের জন্য হোম ভিজিটর পদটি খুবই গুরুত্বপ‚র্ণ হলেও এই লোকবল নেই অনেক দিন ধরে। যক্ষা রোগীরা ওষুধ সেবন শুরু করার পর নিয়মিত না করলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্রেন্স হতে পারে। এতে করে রোগী মৃত্যু ও আশপাশের সুস্থ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ। এসব তদারকির জন্যই হোম ভিজিটর পদ সৃষ্টি করা হয়। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদটি শ‚ন্য দীর্ঘদিন ধরে। ফার্মাসিস্ট, ল্যাব টেকনিশিয়ান, সহকারী সেবক, অফিস সহায়ক, আয়া পদেও কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। ঝাড়–দার পদে দু’জন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছে একজন। এ ছাড়া প্রায় শতবর্ষী এই চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রটি সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। চেয়ার-টেবিলগুলোও অধিকাংশ ভাঙা। ঝুঁকিপ‚র্ণ ভবন ও জনবল সংকটের মধ্য দিয়েই একজন চিকিৎসক প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, বিল্ডিংয়ের ছাদে ভাঙন, দেয়ালে ফাটল ধরেছে। কখন যে ভবনের কোন অংশ মাথার ওপর ভেঙে পড়ে জানি না। রোগীদের জন্য বসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৪-৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। এমনিতে অসুস্থ তার পরে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়ে দুই জেলার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপ‚র্ণ ভবনে এসে চিকিৎসা নিতে ভয় লাগে। এখানে শুধু যক্ষার ওষুধ দেয়া হয়।
এর পাশাপাশি যদি ক্যালসিয়াম, গ্যাস, বমি, কাশির ওষুধ দেয়া হতো তা হলে আমাদের গরিব মানুষের জন্য ভালো হতো।
ক্লিনিকে কর্মরত একমাত্র মেডিকেল অফিসার ডা. খাজা বদরুদ্দোজা বলেন, ‘মাথার উপরের প্লস্টারগুলো খুলে খুলে পড়ছে। ভবনের অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা ঝুঁকির মধ্যে থেকেই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। যে কোনো সময় ছাদ ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার কথা জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। এ ছাড়াও এ ক্লিনিকে জুনিয়র কনসালটেন্ট বক্ষব্যাধির একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে শ‚ন্য। আমি মেডিকেল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে রোগীদের আরো ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া যেত।
এ ছাড়া এই ক্লিনিক ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ থাকলেও আছেন মাত্র ৩ জন। এদের মধ্যে একজন ঝাড়–দার রাতে ডিউটি করে। দিনের বেলায় থাকি আমি আর একজন ড্রাইভার। এই দুজন দিয়ে চলছে ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, টিবি ক্লিনিককে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা অনুমোদন আছে এবং শুন্য পদগুলো পুরনের জন্য প্রতিমাসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।