মাছ শুধু বাঙ্গালীর খাদ্যই নয়, মাছের কদর পৃথিবীর সর্বত্রই। ভোজন রসিক থেকে শুরু করে মৎস্যবিজ্ঞানী সবার পাতে ভাজা মাছ থাকলে আর কোনও কথাই নেই। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও খাদ্য-তালিকায় মাছ এক গুরূপত্বপূর্ন স্থান দখল করে রয়েছে। ভূ-তত্ত¦, জীবাশ্ম এবং ভ্র–নতত্ত¦ অনুযায়ী দেখা যায় আজ থেকে কোটি বছর আগে এ পৃথিবীতে মাছের অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ২৫ হাজার প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর একটি সামান্য অংশই আমরা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। অন্যদিকে মাছ খাওয়ার পদ্ধতি ও পরিবেশভেদে পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। আমাদের এ দেশে সহজে প্রাপ্য কয়েক প্রকার মাছের খাদ্যগুন এবং রোগ প্রতিরোধকারী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নীচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
রুই ঃ রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম লেবিও রুহিতা। ১০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছে প্রোটিন ১৮.৩৫ শতাংশ, ফ্যাট ৯.৫৬ শতাংশ, জলীয় অংশ ৭৪.৬ শতাংশ, ক্যালসিয়াম ৬৫০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৮৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১০১ মিলিগ্রাম, কলিন ৮১৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি এম সি জি, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি পাওয়া যায়। এর তাপমূল্য ৯৭ ক্যালরী। খাওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে হজম হয় এই মাছ। রুই মাছ স্নিগ্ধ বল-বীর্য বর্ধক, সামান্য পরিমানে পিত্ত জমা হয়ে থাকে যদিও পেটে কোনও বায়ু জমা হতে দেয় না। এছাড়াও চোখের অস–খ, মস্তিস্ক এবং নাকের বিভিন্ন প্রকার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
মিরগা ঃ মিরগা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম কিরহিনা মৃগালা। ১০০ গ্রাম মিরগা মাছে প্রোটিন ১৮.০৭ শতাংশ, ফ্যাট ০.৩৩ শতাংশ, জলীয় অংশ ৭৯.১ শতাংশ, কার্বোহাইড্রেট ৩ শতাংশ, ক্যালসিয়াম ৩৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৮০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৯ মিলিগ্রাম, কলিন ৪০০ মিলিগ্রাম ইত্যাদি পাওয়া যায়। এর তাপমূল্য ৯৮ ক্যালরী। মিরগা মাছ মানব শরীরের পিত্তজনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত করে রাখে। অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে হজম হয়ে থাকে এ মাছ।
শিং ঃ এ মাছগুলোর বিশেষত্ব হলো এর কাটা কম এবং আঁশবিহীন মাছ। শিং মাছের শ্বাসযন্ত্রের গঠন শক্তিশালী। এর ফলে বালতি বা টবের পানিতে রাখলে এরা অনায়াসে দীর্ঘক্ষণ জীবিত থাকে। ১০০ গ্রাম শিং মাছে প্রোটিন ১৯.২ গ্রাম, ফ্যাট ৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪০০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ২.১ মিলিগ্রাম, কঞ্চলিন ৭৮৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৮০০০ এম সি জি পাওয়া যায়। এর তাপমূল্য ১৩৪ ক্যালরী। শিং মাছের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। সেগুলোর বিশ্লেষন করলে অবশ্য প্রোটিন ফ্যাটের তারতম্য পাওয়া যায়। যারা সারা বছর সর্দি কাশি ইত্যাদি রোগে ভোগেন তাদের সব সময় শিং মাছ খাওয়া উচিত। এটা খুবই উপকারী মাছ। সহজ পাচ্য এবং সহজলভ্য। শিং মাছ পাচক রসের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। লিভারের বিভিন্ন রোগে এ মাছ এক মহৌষধি হিসেবে কাজ করে।
মাগুর ঃ শুধু মাত্র মেরুদন্ড এবং মাঝের কিছু কাটার কথা ছেড়ে দিলে মাগুর মাছের কোন কাটাই নেই। শিং মাছের মত মাগুর মাছকেও দীর্ঘসময় ধরে জিইয়ে রাখা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব প্রান্তেই মাগুর মাছ পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে ১৯.৪৯ শতাংশ প্রোটিন, ০৫ শতাংশ ফ্যাট, ৭৮.৮৫ শতাংশ জলীয় অংশ, ২১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৯০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৬৩৯ মিলিগ্রাম কলিন পাওয়া যায়। এ মাছ খাওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যেই হজম হয়। এ মাছ শরীর ঠান্ডা রাখে। পিত্ত সংক্রান্ত প্রকোপ থেকে রক্ষা করে। আমাশয়ে আক্রান্তদের জন্য এ মাছ যথেষ্ট উপকারী। এছাড়াও এ মাছ শরীরে রক্তের পরিমান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্লীহা এবং লীভারের বিভিন্ন প্রকার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
সবশেষে এটুকু বলা যায়, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য- তালিকায় নিয়মিতভাবে মাছকে স্থান দেওয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজনে সুবিধা অনুযায়ী নিজের উদ্যোগে মাছ পালন শুরু করা যায়।