ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার বিশেষ উইং খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ উইং গঠনে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। যার প্রধান করা হবে একজন অতিরিক্ত সচিব। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ডেঙ্গুসহ সব মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে শিশুদের জানানোর জন্য পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছে। তবে শহর ও গ্রামে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে তাই এটি প্রতিরোধে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি। এদিকে স্থায়ীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগ: সমন্বিত ব্যবস্থাপনা’-শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গবর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ মনজুর আহমেদ চৌধুরী। সেমিনার সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি। তবে সপ্তাহে একদিন দুদিন বা মৌসুম নয় এখন থেকে সারাবছর এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একা নয় ডেঙ্গু প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে, সঙ্গে পাবলিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে বা চিরতরে নির্মূল করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। অন্যথায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, একসময় এ রোগ বর্ষাকালে হয় বলে ধারণা করা হলেও সম্প্রতি দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগ শীতকালেও হতে পারে। এছাড়া সিজনারি কাজ করে সফলতা পেলে, পরে তার গুরুত্ব না থাকায় পুনরায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। তাই সবাইকে সচেতনতা তৈরির পাশপাশি সারাবছরই এ নিয়ে সরকার কাজ করতে হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার জন্য মূল সমস্যা ছিল সমন্বয়হীনতা। শুধুমাত্র সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সঠিক সমন্বয় না থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তবে ভবিষ্যতে তা হতে দেয়া যাবে না। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের আশা অনুযায়ী সব কিছু সরকারও করতে সক্ষম হয়নি। তবে আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে তা রুখতে কাজ করতে হবে। আমেরিকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বিশ্বব্যাপী। এমনও হয়েছে শুধুমাত্র একবছরেই ডেঙ্গু রোগে আমেরিকায় হাজারে এক লোকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এবছরই উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে সে তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে মৃত্যুব হার তুলনামূলক বেশি ছিল।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে ও শহরে একমাত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই সরাসরী সম্পৃক্ত। তাই আমাদের মন্ত্রণালয়ই কেবল ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে সক্ষম। তবে সাদা বা কালো ময়লা পানি নয় সকল বদ্ধ পানি ফেলে দিতে হবে। এছাড়া বর্জ্য থেকে মশার জন্ম হয় বলে গ্রাম থেকে শহর সব স্থানে মশার উৎপাদনস্থল ধ্বংস করে দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত যাব। মন্ত্রী বলেন, আমরা শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। অতি দ্রুত এ কাজ শুরু করা হবে। মন্ত্রী ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে সবাইকে নিজ নিজ স্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে লাইন মিনিস্ট্রি ঠিক করতে হবে। এছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা জরুরী। আমাদের দেশে এ নিয়ে কোন রিসার্চ নেই, নেই রিসার্চেও ডেভেলপমেন্ট। তাই শুধু আলোচনা নয় ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না তাও ভাবতে হবে।