শরীরে কোষের মধ্যে পিউরিন নিউক্লিওটাইড নামক এক যৌগ থাকে। সাধারণত এই পিউরিন ভেঙে গিয়ে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। অন্যদিকে অনেক খাদ্যের মধ্যেও পিউরিন থাকে। সেখান থেকেও শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এরপর শরীরে তৈরি হওয়া ইউরিক অ্যাসিড রক্তে এসে মেশে।
সাধারণত কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডকে শরীর থেকে বের করে দেয়। এটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে অনেক সময় এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটিতে ব্যাঘাত ঘটে। তখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যার নাম হাইপারইউরিসিমিয়া।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি সমস্যা থাকলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে। আবার ভুল খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মিত জীবনযাপন করলেও ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়।
কী কী সমস্যা হয়?
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে গাউট আর্থ্রাইটিস হতে পারে। এই রোগে শরীরের অস্থিসন্ধিগুলিতে ইউরিক অ্যাসিড ইউরেট হিসাবে জমা হয়। বিশেষত হাঁটু, গোড়ালি, হাতের কনুইয়ের পাশাপাশি কব্জি ও আঙুলের গাঁটে গাঁটে ব্যথা হতে পারে। আক্রান্ত অস্থিসন্ধিগুলো লাল হয়ে ফুলে যায়, প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। চাপ পড়লে ব্যথা আরো বাড়ে
আবার ইউরিক অ্যাসিড থেকে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যার নাম ইউরেট নেফ্রোপ্যাথি। কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জমে স্টোনও হতে পারে।
চিকিৎসা
ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ সামান্য বেশি থাকলে সাধারণত ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বদলে বেশি পরিমাণে পানি পান করা, ব্যায়াম করা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
তবে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার জন্য শরীরে সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ রয়েছে। পাশাপাশি জীবনযাপন পরিবর্তনের দিকটিও যুক্ত হয়।
খাওয়াদাওয়া
যেকোনো মরশুমি শাকসব্জি খেতে পারেন। কম ফ্যাট যুক্ত দুগ্ধজাত খাদ্য, কমলালেবুর মতো ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া ভালো। রান্না হবে সুপাচ্য। অর্থাৎ বেশি ঝাল-মশলা দিয়ে খাওয়া যাবে না। দিনে এতটা পরিমাণ পানি পান করুন, যাতে অন্তত পক্ষে দুই লিটার ইউরিন হয়।
কিছু বাধানিষেধ
সামুদ্রিক মাছ, রেড মিট, চিংড়ি, কাঁকড়া, ধূমপান, মদ্যপান করা চলবে না। পাশাপাশি রাতজাগা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, রোদে ঘোরা থেকেও বিরত থাকতে হবে।