বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়স্করা স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেও অল্প বয়সীদেরও এ সমস্যা হতে পারে। তাই যেকোনো বয়সে স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই অবহেলা করা চলবে না। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, স্ট্রোকের রোগীর জন্য সময় মহামূল্যবান। সময় পেরিয়ে গেলে মূল চিকিৎসার সুযোগ কমে যায়। তখন কেবল সহায়ক চিকিৎসা চলে। এতে পরবর্তী জীবনের জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব হয় না। কাজেই ছোট-বড় সব লক্ষণের দিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহনকারী রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। সাধারণত শরীরের এক পাশ দুর্বল বা অবশ হয়ে গেলে আমরা বলি স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত হয়েছে। কিন্তু সব সময় যে এমনটাই হবে, তা নয়। স্ট্রোকের আরও উপসর্গ আছে। এসব উপসর্গ নির্ভর করে মস্তিষ্কের ঠিক কোন জায়গায় স্ট্রোক হয়েছে, তার ওপর।
হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা, যা কোনো কিছুতেই কমছে না—স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। বমি বা মাথা ঘোরানো, খিঁচুনি হতে পারে। স্ট্রোকের কারণে হঠাৎ কথা জড়িয়ে যাওয়া, কথা বলতে কিংবা বুঝতে অসুবিধা হওয়া, খেতে অসুবিধা, ঠোঁটের কোণ দিয়ে খাবার গড়িয়ে পড়া, কিংবা মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। রোগীর চোখ বুজতে সমস্যা হতে পারে, আবার চোখের পাতা ঝুলে থাকতে পারে। দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। ঝাপসা দেখা, একটি জিনিস দুটি দেখা কিংবা কানে শুনতে সমস্যা হতে পারে।
মুখের কোনো অংশ অবশ হয়ে পড়তে পারে, এক হাত বা এক পায়ে বোধশক্তি কমে যাওয়া কিংবা এক হাত বা এক পা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অসংলগ্ন কথা ও আচরণ, এমনকি চেতনা হারালেও স্ট্রোকের কথা ভাবতে হবে। হঠাৎ করে কেউ লিখতে পারছেন না, ডান-বাঁ বুঝতে পারছেন না, হঠাৎ সাধারণ গণনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে সাবধান হতে হবে।
ছোট–খাটো লক্ষণকে পাত্তা না দেওয়ার কারণে স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে অনেকটা মূল্যবান সময় চলে যায়। স্ট্রোক হয়েছে বুঝতে পারলেই কাছের যেসব হাসপাতালে সর্বাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে রোগীকে তেমন কোনো হাসপাতালে নিতে হবে। মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে ফেলার ওষুধ শিরাপথে বা ধমনিপথে প্রয়োগ করে, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে রক্তনালির মধ্যে জমাট রক্ত সরিয়ে এবং রক্তনালি থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত (রক্তক্ষরণ) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা সম্ভব।
ডা. রাফিয়া আলম
নিউরো আইসিইউ স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা