উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১২ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে একটি শিশু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ৭৫ লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণ ছানিজনিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ সচেতন হলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা বা অন্ধত্ব কমানো সম্ভব। বর্তমানে বিশ্বে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন কোটি ৬০ লাখ; তা বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ সাড়ে ১১ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। চোখের চিকিৎসার আরও উন্নতি ঘটাতে না পারলে আগামী ৩৩ বছরে বিশ্বে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চোখের পরিচর্যা বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের অভাব ও অসচেতনতার কারণে অনেক মানুষ চোখের নানা সমস্যায় ভুগছে এবং অনেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। অন্ধের সংখ্যা বাড়ার পেছনের মূল কারণ বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকা। অন্ধত্বের হার ও চোখের সমস্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়া ও সাব সাহারা আফ্রিকায়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দিক থেকে তুলনা করলে দৃষ্টি হারানো মানুষের সংখ্যা আগের চেয়ে কম। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ায় চোখের সমস্যার ব্যাপকতা বাড়ছে। আগামী কয়েক দশকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ১৮৮ দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২০ কোটির বেশি মানুষ মাঝারি থেকে গুরুতর চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এক কোটি ১৭ লাখ, পূর্ব এশিয়ার ৬২ লাখ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৩৫ লাখ, সাব সাহারান আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশের বেশি মানুষ, পশ্চিম ইউরোপের মোট জনসংখ্যার প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অন্ধত্বের শিকার । প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দৃষ্টি সামান্য ঝাপসা হয়ে এলেও একজন মানুষের জীবনে যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যেমন, বিষয়টি তাদের স্বাধীনতা সীমিত করে দিতে পারে, এ ধরনের সমস্যার কারণে তাদের অনেকে গাড়ি চালাতে পারেন না। তখন তাকে বাধ্য হয়েই গাড়ি চালানোর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টিও জড়িত। অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী দেশও লাভবান হবে। কারণ এই বিনিয়োগে আয় হবে বহুগুণ বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খুব সহজেই এসব অন্ধত্ব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এসব ব্যবস্থা একদিকে যেমন সস্তা, অন্যদিকে অবকাঠামোর প্রয়োজনও হয় খুব কম। আর অন্ধত্ব থেকে ফিরে আসা লোকজন আবার কাজে যোগ দিলে চিকিৎসা খরচও তুলে আনতে সক্ষম হবে। এসব দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিসহ আরও বেশি সার্জন এবং সেবিকাদের প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন, যাতে করে তারা চোখের টেকসই চিকিৎসাসেবা দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের ছয় দফা দাবি ॥ দীর্ঘদিন ধরে চাকরি সংক্রান্ত ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। চাকরিপ্রত্যাশী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের ব্যানারে তারা এসব দাবি করে থাকেন। ছয় দফা দাবির মধ্যে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী চাকরিতে বিশেষ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দেয়া অন্যতম। এ ছাড়া পিএসসির রিসোর্স শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ওই পদে উপর্র্যুক্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রুতি লেখক নীতিমালা চাকরি পরীক্ষায় মেনে চলার নিশ্চয়তা, স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর চাকরিতে যোগদানের আগ পর্যন্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ১০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা । সূত্র জনকণ্ঠ।