হতদরিদ্র ৬ লাখ নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে প্রকল্প ‘যত্ন’

দেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় হতদরিদ্র পরিবারের ছয় লাখ নারী ও শিশুর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখার জন্য ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুয়োরেস্ট (আইএসপিপি)’ বা ‘যত্ন’ নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দুই হাজার ৩৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বাকি ৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উত্তর বঙ্গের সাত জেলার হতদরিদ্র নারী ও শিশু অপুষ্টি থেকে মুক্তি পাবেন। প্রকল্পটি চলতি মাসেই ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৩ উপজেলায় চালু করার কথা রয়েছে। খবর জনকণ্ঠের।

প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় সরকার সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলার ৪৪৩ ইউনিয়নে অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিশুর পুষ্টি এবং মনোদৈহিক বিকাশে মা ও শিশুর কল্যাণে যত্ন নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় লাখ মা ও শিশু উপকারভোগী হবেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে অপুষ্টিতে মানুষ ভুগে আসছেন। বিশেষ করে হতদরিদ্র মানুষের অপুষ্টির সমস্যা বহু বছর ধরেই রয়েছে। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ সহযোগিতাই বেশি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অল্প টাকা প্রকল্পে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সফল হলে সারাদেশেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে প্রকল্পটি ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২০ সালের জুনে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার সাতটি উপজেলার ৮২ ইউনিয়ন, কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলার ৭২ ইউনিয়ন, লালমনিরহাটের একটি উপজেলার ১২ ইউনিয়ন এবং নীলফামারী উপজেলার ১১ ইউনিয়নসহ মোট ১৮ উপজেলা এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলার ১৪৬ ইউনিয়ন, জামালপুরের সাতটি উপজেলার ৬৮ ইউনিয়ন এবং শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫২ ইউনিয়ন এই প্রকল্প কার্যক্রম এ মাসেই শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিশুর পুষ্টি এবং মনোদৈহিক বিকাশে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের ফলে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে এবং উক্ত পরিবারের উপার্জন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ছয় লাখ নারী-শিশু এবং তাদের পরিবার দারিদ্র্য হতে মুক্তি লাভ করবে। উপকারভোগী মায়েদের সরাসরি নগদ অর্থ প্রদানের ফলে পরিবারে নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে সমাজে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নে বিকল্প উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চালু করা হয়। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাতটি জেলার ৪৩ উপজেলায় অতিদরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শূন্য থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের পুষ্টি ও মনোদৈহিক বিকাশ সাধন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম পরিচালনায় ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটির মাধ্যমে ছয় লাখ নারী-শিশু উপকৃত হবে। সঠিক সময়ে তথ্য না পাওয়ার কারণে এই প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুরু করা করা যায়নি।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, অতিদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং ৫ বছরের কম বয়সী প্রথম ও দ্বিতীয় শিশু ও তাদের মা যারা চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রতিবার ২শ’ টাকা করে মোট ৮শ’ টাকা, জন্মের পর দু’বছর পর্যন্ত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপের জন্য প্রতিমাসে ৫শ’ টাকা এবং দু’বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুর ওজন ও উচ্চতা মাপের জন্য এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে বাস্তবায়ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি রয়েছে এবং প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক, উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন কমিটি প্রকল্প উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির দায়িত্ব পালন করছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্থানীয় সরকার বিভাগ অতিদরিদ্রদের জন্য আইএসপিপি-যত্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আয় সহায়ক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে অনেক আগেই। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাতটি জেলার ৪৩ উপজেলায় অতিদরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও তাদের মায়ের সুনির্দিষ্ট সেবা গ্রহণের বিপরীতে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। এই কর্মসূচীর উপকারভোগী হচ্ছে অতিদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী, ৫ বছরের কম বয়সী প্রথম ও দ্বিতীয় শিশু এবং তাদের মা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচিত ৪৩ উপজেলায় অতিদরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং শূন্য থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুর মাদের সুনির্দিষ্ট সেবা গ্রহণের বিপরীতে নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টি ও মনোদৈহিক বিকাশ সাধন করা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম পরিচালনায় ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাও আরও একটি উদ্দেশ্য।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *