এখন উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে

সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি মানুষের মেডিকেল চেক-আপ জরুরি। কিন্তু নানান ঝামেলার কারণে মানুষকে এসব সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষত, বাংলাদেশের মানুষ যখন দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে যাচ্ছে তখন তাদের নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বিষয়টি খুব স্বাভাবিক নয় কি? নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা। চিকিৎসা সেবা প্রার্থীদের যেন এসব ঝামেলায় পড়তে না হয় অর্থাৎ তাঁরা যেন সুন্দর স্বাভাবিক এবং নির্মল পরিবেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই নিরলসভাবে কাজ করছে একদল লোক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের চিকিৎসা।

বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম পছন্দ প্রতিবেশী দেশগুলো। চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ যান ভারতে।ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে মোট দুই লাখ ২১ হাজার ৭৫১ জন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারত গেছেন। ভারতের কমার্শিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবা রফতানির বিষয়ে পরিচালিত এক জরিপ বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬০ হাজার বিদেশি রোগী ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার। ওই জরিপে আরও জানানো হয়েছে, ভারতে বিদেশি রোগীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই বাংলাদেশি এবং দেশটির মেডিকেল ট্যুরিজম খাতের অর্ধেক আয় আসে বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে। যা ভারতের মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ ট্যুরিজম খাতের সবচেয়ে বড় অবদানকারী।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানের ওপর সর্বশেষ যে র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম৷ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে কেবল শ্রীলঙ্কা৷ তাদের অবস্থান ৭৬তম৷ ভারত ১১২ এবং পাকিস্তান রয়েছে ১২২তম অবস্থানে৷ ভুটান ১২৪, মালদ্বীপ ১৪৭, নেপাল ১৫০ এবং সবথেকে পিছনে রয়েছে আফগানিস্তান, ১৭৩তম অবস্থানে৷ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো বলে এই র‌্যাংকিংয়ে প্রতীয়মান হয়েছে৷

তারপরও মানুষ ভারত যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম ভাষা। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম ভাষা। ভাষিক সমস্যা থাকলে মানুষে মানুষে ফলপ্রসূ যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণে বিদেশ যায়। ভাষাগত সমস্যার কারণে রোগীরা নানান ক্ষেত্রে তাদের মনের ভাব চিকিৎসকের কাছে প্রকাশ করতে পারেন না। এরপর রয়েছে খাবার। প্রতিটি দেশের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। খাবার সংস্কৃতির অংশ। তাই প্রতিটি দেশের খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। বাংলাদেশ থেকে যেসব সেবা প্রার্থী বিদেশে যান তারা খাবার নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন।          

থাকার জায়গা আরেকটি সংকট। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাওয়া মানুষজনের থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এক্ষেত্রে তাদের হয়তো হোটেল বা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। অনেক সময় সুবিধা মতো জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পছন্দসই জায়গায় থাকতে হলে গুণতে হয় বাড়তি খরচ। দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় দীর্ঘ ভ্রমণ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বয়োঃবৃদ্ধ এবং সংকটাপন্ন রোগীদের এক্ষেত্রে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যাঁরা বিভিন্ন বাহন ভ্রমণে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন না তাদেরও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একেকটি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ধরন একেক রকম। জটিল রোগের চিকিৎসা দীর্ঘসময় ধরে করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যেসব চিকিৎসাপ্রার্থী বিদেশে যান তাদের চিকিৎসাবাবদ বিপুল অংকের টাকা খরচ হয়। এবং এর পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক কাজও ব্যাহত হয়।

বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ভালো ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া। ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর। এছাড়া দালালের খপ্পড়ে পড়া, ভিসা প্রসেসিং নিয়ে সমস্যা তো রয়েছেই। সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ার কারণে অনেক সময় বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আগে থেকেই যেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবে সেখানে ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে থাকার জায়গার ফরমাশ দেয়া থাকে। সঠিক সময়ে ভিসা না পেলে চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেশ কিছু খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও দেশটি বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশেই এখন অভিনব পদ্ধতির উন্নত সেবা পাওয়া যাচ্ছে, যা রোগীদের বিদেশমুখীতা বহুলাংশে কমিয়েছে। বাংলাদেশের রোগীদের এসব ঝামেলার কথা বিবেচনা করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের সেবা দিচ্ছে বেশ কিছু হাসপাতাল। বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে এসব হাসপাতালগুলো। দেশের বেশ কিছু হাসপাতাল এখন অভিনব পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে। এসব হাসপাতালে রিজেনারেটিভ পদ্ধতিতে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছে। এছাড়াও, এসব হাসপাতালগুলো স্ট্যাম্প সেল থেরাপীর মাধ্যমেও রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু হাসপাতাল অত্যাধুনিক মলিকুলার ল্যাবের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করছে। এসব ল্যাবে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশের বেশ কিছু হাসপাতালে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাক্তারদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখন ঝামেলাবিহীন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ওয়ান-স্টপ-সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে হাসপাতালগুলো।

চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ এশিয়ার একজন প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেশের  চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশের এই অত্যাধুনিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করলে রোগীদের বিদেশ গিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। এতে করে তাদের টাকা-পয়সা ও সময় বাঁচবে। এর ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্র রাইজিং বিডি

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *