সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই তাদের কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ প্রোফাইল সম্পর্কে জানেন না এবং সাধারণ হৃদরোগ ও আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া আসলে ধমনী ব্লক হয়ে যাওয়ায় রক্তের সংবহনজনিত একটি সমস্যা এবং এর লক্ষণ তৎক্ষণাৎ কিংবা অ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টা আগে দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে অ্যাঞ্জাইনা পেইন যা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে এমনকি বছর পরও। যদিও আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর ক্ষেত্রে, এটি অনেকটা ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা যা হৃদযন্ত্রের কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে হয় এবং যদি স্বল্প সময়ের মধ্যে তার উপযুক্ত চিকিৎসা না করা যায় তাহলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজের প্রফেসর অফ কার্ডিওলজি প্রফেসর ডঃ মহসিন হোসেন। ইলেক্ট্রোফিজিওলজির উপর যার বিশেষজ্ঞতা রয়েছে তিনি জানান, বেশিরভাগ হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন এর পেছনে দায়ী যার আরেকটি নাম হল অ্যারিদমিয়াস। অস্বাভাবিক ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দন প্রাণঘাতী হতে পারে যা হৃদয়ের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে, যদি না উপযুক্ত সময়ে তার চিকিৎসা করা হয়। যদিও এই ধরণের প্রাণঘাতী পর্বে থেকে রক্ষা পেতে, আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে চিকিৎসা করে থাকি যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।যে সব রোগী হাইপারটেনসন, ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি বা স্থুলত্বের মতো সমস্যার শিকার এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেন তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সবথেকে বেশী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই ধরণের রোগীদের নিয়মিত হার্ট চেক আপ ও বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ প্রয়োজন।
তবে, যে সব রোগী হৃদযন্ত্র থেকে কম রক্ত পাম্প হওয়ার সমস্যার মধ্যে রয়েছেন যাদের এই সক্ষমতা মাত্র ৩৫৫ অথবা তাঁর কম (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং ইতোমধ্যেই বাইপাস সার্জারি হয়েছে অথবা স্টেন্টিং করা হয়েছে করোনারি আর্টারি ডিজিজ এর কারণে, তারা এই ধরণের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যা কীনা প্রাণঘাতি হতে পারে এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যু নেমে আসতে পারে।
ডঃ মহসিন হোসেন এ সম্পর্ক বলেন, এই ধরনের রোগীদের জন্য যারা আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাদের এর হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাস্কুলার ডিফাইব্রিলেটর (আইসিডি) ইনসার্ট করা যেতে পারে। এটি হল একটি ছোট আকারের মেশিন যা পেসমেকারের মতো হয় এবং অ্যারিদমিয়াস এর সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়। এটি হৃদ গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওঈউ ধারাবাহিকভাবে হৃদ গতির উপর নজর রাখে। যখন এই হার অতি দ্রুত হয়, বা অস্বাভাবিক ছন্দে চলে তখন এটি এনার্জি ডেলিভার করে (ক্ষুদ্র, কিন্তু শক্তিশালী শক) হৃদ পেশীতে ফলে হৃদ গতি ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়। আইসিডি প্রতিটি এই ধরণের ঘটনার ডেটা রেকর্ড করে, যা ডাক্তারেরা হাসপাতালে রাখা সিস্টেম এর তৃতীয় একটি অংশ দিয়ে প্রত্যক্ষ করবেন। যে সব রোগীদের আইসিডি ব্যবহার করা হয়েছে তাদের হৃদ গতি ধারাবাহিকভাবে নজরে রাখা হয়। এটিকে পেসমেকার এর সঙ্গে একযোগে ব্যবহার করা যায় অন্যান্য অনিয়মিত হৃদ গতির সমস্যা রোধে। কাজেই, যে সব রোগীর হৃদয়ের কার্য্যক্ষমতা কমে এসেছে (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং অনিয়মিত হৃদ গতি রয়েছে তাদের জন্য একটি পৃথক ডিভাইস CRT-P ব্যবহার করতে হয়।
যদিও, হৃদগতির ছন্দের প্যাটার্নের ভিত্তিতে, একজন রোগীকে আরো উন্নত ডিভাইস কার্ডিয়াক রিসিঙ্ক্রোনাইজেশন থেরাপি ডিফাইব্রিলেটর ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ডিভাইসটি, যা কম্বো ডিভাইস নামেও পরিচিত, প্রেসমেকার ও আইসিডি এর কম্বিনেশন হিসাবেও গণ্য করা যায়। কারণ তা অনিয়মিত হৃদগতি সমস্যা সিঙ্ক্রোনাইজেসন এর মাধ্যমে সমাধান করে, হৃদগতি মনিটর করে এবং প্রয়োজন হলে আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে রোগীর জীবন রক্ষায় বৈদ্যুতিক শক দেয়।
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, এই ডিভাইসে রয়েছে বিল্ট-ইন ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাস্কুলার ডেইফাইব্রিলেটর। ‘বুকের ত্বকের ভেতর এটি ইমপ্ল্যান্ট করা হয় এবং এর তার শিরার মধ্যে দিয়ে হৃদযন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ সাধন করে, ফলে হৃদগতির উপর নজরদারি সম্ভব হয়। যদি কোন সময় অনিয়মিত অথবা কোন ছন্দ না দেখা যায় তাহলে এই ডিভাইস হন্তক্ষেপ করে এবং হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে সাহায্য করে’, বললেন, প্রফেসর ডঃ মহসিন হোসেন।
এককথায় বলতে গেলে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, এই ধরণের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে মৃত্যু আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে বিশেষত হৃদরোগজনিত কারণে, তবে এর জন্য রোগীকে আরো সতর্ক ও নিজের কার্ডিয়াক প্রোফাইল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।