শীতের আগমন না হওয়া পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টরা। আগস্টের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেলেও সেপ্টেম্বরেও ১৬ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুহারও বেশি ছিল। পিক মৌসুমের শেষ মাস অক্টোবরের প্রথম দিনেও প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নবেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এডিস মশা প্রজননের উত্তম আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। অক্টোবর ও নবেম্বরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। আর বৃষ্টি হলেই প্রজননের পরিবেশ পেয়ে বসে এডিস মশা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়ে থাকে। গত ১৮ বছরের সরকারী পরিসংখ্যানে এই তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। এ বছর জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছে অস্বাভাবিক ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হিসেবে পরিচিতি আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস। আর অক্টোবর মাসের প্রথম দিনেই প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার চিত্রটি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া, ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়া, কার্যকর এডিস মশক নিধন কার্যক্রমের অভাব এবং সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ইত্যাদি কারণসমূহও ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েক মাসের ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে সচেতনতাসহ নানা কর্মসূচী গ্রহণের কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আর নতুন করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যানে জুন থেকে বেশি মাত্রায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হলেও আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় জুলাইয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। ওই মাসে ১৬ হাজার রোগীর বিপরীতে ৩২ জনের মৃত্যু ঘটে। আক্রান্তের সংখ্যার বিবেচনায় জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। কিন্তু সেপ্টেম্বরে মাত্র ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। আর আগস্টে ৫২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর বিপরীতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৭১। এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ১০৬ এবং ঢাকার বাইরে ২৬৫। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ১৪৭২ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯২৫ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৮,৩২৪ জন ও ৮৬,৬১৬ জন। সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৮ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ১৯১ জন, চট্টগ্রামে বিভাগে ১৪০ জন, খুলনা বিভাগে ৩২৯ জন, রংপুর বিভাগে ৩১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬৪ জন, বরিশালের ৬ জেলায় ১২৭ জন, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তামানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৮ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৬ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৫ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে নতুন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৮জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৭ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।