চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ নানান সমস্যার মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ উপজেলা কমপ্লেক্সটি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলার সাড়ে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ২০০৮ সালে উপজেলাবাসীর উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষে এ হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও জনবল। বর্তমানে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এতে করে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার হত দরিদ্র মানুষগুলো।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাও তিনি সপ্তাহে দুইদিন কাজ করেন এ হাসপাতালে। আর বাকী চারদিন ডেপুটেশনে কাজ করেন লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে। এতে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার বাসিন্দারা।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হয়েও তারা সময়মতো কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেখা পাননা। ডাক্তাররা তাঁদের ইচ্ছেমত আসেন এবং যান। টাকা না দিলে দেখা মিলেনা সেবিকাদেরও। এছাড়া হাসপাতালটিতে এক্সরে, আল্ট্রসনোগ্রাফ মেশিন অকেজো থাকায় ও টেকনিশিয়ানের অভাবে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা বাহির থেকে করাতে হয় এখানে ভর্তিকৃত রোগীদের। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, এখানে সেবা নিতে আসা রোগীরা।
এদিকে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে ডাক্তারের কাছে আসলেই তাদেরকে প্রাইভেটে দেখানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। তবে হাসপাতালে কর্তব্যরত সেবিকা মুক্তা জানান, ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে ওয়ার্ডে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তার পরও ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে চেষ্টা করছেন তারা। রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের রিকশাচালক মনির হোসেন জানান, রিকশা চালাতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছেন তিনি। তাই সেবা নিতে এ হাসপাতালটিতে এসেছেন। কিন্তু অর্থোপেডিক চিকিৎসক না থাকায় নিরুপায় হয়ে তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।
হাসপাতালে প্রসব বেদনা নিয়ে চিকিৎসা নিতে উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। নিরাপদ মাতৃত্ব ও মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা পেতে হাসপাতালটিতে গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদানের দাবী জানান তিনি।
এদিকে রাবেয়া আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রী চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে সেবা নিতে এ হাসপাতালের আউটডোর থেকে টিকেট সংগ্রহ করেন। কিন্তু চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় তাকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। এতে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই রোগী।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বাহারুল আলম জানান, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের মানসম্মত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। চিকিৎক সংকট নিরসন হলে রোগীরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে জানান তিনি।
মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রদক্ষেপ নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা এ উপজেলাবাসীর।