বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কোর্সের নিবন্ধন প্রদান না করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ)।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসমত আরা পারভীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মো. জামাল উদ্দিন বাদশা, বিএনএর ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ।
তারা বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাসকরাদের নিবন্ধন দেয়া হলে নার্সিং শিক্ষা নীতিমালা বাস্তবায়নে সংকট সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সেবা গ্রহণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সেবার মান ধ্বংস এবং বহির্বিশ্বে নার্সদের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াসহ এসডিজি অর্জন বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
ইসমত আরা পারভীন বলেন, অত্যন্ত নিম্নমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে কারিগরি বোর্ড থেকে পাসকৃতদের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কোর্সের নিবন্ধন দেয়া হলে অগ্রসরমাণ নার্সিং পেশার প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে। তাই স্বাস্থ্যসেবাকে নিশ্চিত ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে আমরা বিশাল পার্থক্য ও নিম্নমানের প্রশিক্ষণ যা অনৈতিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাদের কোনো অবস্থায়ই ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের নিবন্ধন মেনে নিতে পারি না এবং মানব না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের নিবন্ধিত সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্নকারীদের মতো সমপর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাসকরাদের নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেয়ার কোনো যুক্তিকতা নেই বলে জানান তিনি।
এর পক্ষে বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হচ্ছে-
>> স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত ও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল নিবন্ধিত ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাসকৃত পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্ট কোর্সের সকল বিষয়বস্তু ভিন্ন। তাই একই নামে নিবন্ধন পাওয়ার দাবি অযৌক্তিক।
>> জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল অ্যাক্ট-১৯৩৪, পরবর্তিতে পাকিস্তান নার্সিং কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৫২, পরবর্তিতে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স– ১৯৮৩ ও বর্তমানে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন- ২০১৬ দ্বারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল শিক্ষার ন্যায় নার্সিং শিক্ষা পরিচালিত হওয়ায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কখনোই স্বাস্থ্য শিক্ষা বা নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বৈধ কর্তৃপক্ষ হতে পারে না।
>> বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট ভর্তির ক্ষেত্রে এইচএসসি ব্যাকগ্রাউন্ড, জিপিএ, বয়স, সেশন, জেলা কোঠা ও পুরুষ – মহিলা কোঠা বিবেচনা করলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এর কোনোটাই মানা হয় না। শুধুমাত্র এসএসসি বা সমমান পাসের যে কেউ ভর্তি হতে পারে।
>> বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ক্ষেত্রে মেডিকেল স্টুডেন্টদের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নার্সিং স্টুডেন্ট ভর্তির ব্যবস্থা থাকলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে তা নেই।
>> বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধিভুক্ত সব প্রতিষ্ঠান নার্সিং শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত। শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকেই হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস (ব্যবহারিক শিক্ষা) বাধ্যতামূলক হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে তা নেই।
>> কাউন্সিল কর্তৃক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল ও নার্সিং বিশেষজ্ঞসহ স্টেকহোল্ডার সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং ডাব্লিউএইচও, ইউএনএফপিএ এর বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থাৎ প্রার্থীর ভর্তির যোগ্যতা, কোর্সের শিরোনাম, বিষয়সমূহ, ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক পাঠদানের সময় বণ্টন, কোর্সের মেয়াদ ও পূর্ণমান, পাস নম্বর নির্ধারণ করা হলেও কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে এসব কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি কোন মেডিকেল বিশেষজ্ঞ বা নার্সিং বিশেষজ্ঞ দ্বারা কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন বা পরিচালনা করা হয় না।
>> মেডিকেল বা নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেমন প্রকৌশলী বা স্থপতিদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালন করা যায় না তেমনি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চিকিৎসা শিক্ষা বা নার্সিং শিক্ষা পরিচালনা নৈতিকতা বিরোধী।
>> বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এ নামে কোনো কোর্স নেই। বিধায় একই নামে নিবন্ধন প্রাপ্তির দাবি অযৌক্তিক।