থাইরয়েড ক্যান্সার

থাইরয়েড গলার নিচের অংশে দুই পাশে থাকে। মানুষের আকৃতি এবং মেটাবলিক অ্যাক্টিভিটির ওপর নির্ভর করে এটি ১০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হতে পারে।

থাইরয়েড বড় হলেই ক্যান্সার হয়েছে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। থাইরয়েড বড় হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। গলগণ্ড রোগ এর মধ্যে অন্যতম। যে অঞ্চলে খাদ্যে আয়োডিনের অভাব আছে সে অঞ্চলে নারীদের গলগণ্ড রোগ বেশি হয়। বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন আয়োডিনের অভাবে। এ ছাড়া হাইপার থাইরয়ডিজম এবং থাইরোটক্সিকোসিসও হয়ে থাকে। এগুলো কোনোটিই ক্যান্সার নয়। ক্যান্সার হওয়ার সব কারণ আমাদের জানা নেই।

তবে অল্প বয়সে রেডিয়েশনে এক্সপোজড্‌ হওয়া এর অন্যতম কারণ। কিছু পারিবারিক কারণও রয়েছে। গলগণ্ড রোগের শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্যান্সার হয়ে থাকে।

থাইরয়েড ক্যান্সারের বেশ কিছু ভাগ রয়েছে। ডিফারেনসিয়েটেড থাইরয়েড ক্যান্সারের মধ্যে প্যাপিলারি কারসিনোমা সবচেয়ে বেশি হয়। এর পরে আছে ফলিকুলার কারসিনোমা এবং অন্যান্য গ্রুপ। বেশি ছড়িয়ে না পড়লে এই ক্যান্সার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ নিরাময় সম্ভব।

থাইরয়েড ক্যান্সারের অন্যান্য প্রকার হলো– মডুলারি কারসিনোমা, এনাপ্লাস্টিক কারসিনোমা, লিম্ম্ফোমা ও সারকোমা। ডিফারেনসিয়েটেড ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা। আইসোটোপ টেস্টের পর প্রয়োজন হলে আয়োডিন অ্যাবলেশন থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। প্যাপিলারি কারসিনোমা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লেও নিরাময় করা সম্ভব।

সার্জারি করে থাইরয়েড সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়ার পর থাইরয়েড হরমোন সারাজীবন খেতে হবে। এই হরমোন শরীরের হরমোন ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি থাইরয়েড টিউমার হওয়ার প্রবণতা প্রশমন করে।

এনাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার খুব বেশি দেখা যায় না। তবে এটা হলে খুবই মারাত্মক হয়। এটা বয়স্কদের বেশি হয়। ঘাড় তাড়াতাড়ি ফুলে যায়। খাদ্যনালি ও শ্বাসনালিতে বিস্তৃতির কারণে খাবার খেতে অসুবিধা হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

মেডুলারি থাইরয়েড কারসিনোমা শতকরা ২৫ ভাগ পারিবারিক কারণে হয়। এ ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সার্জারির পরে রোগ ফিরে এলে রেডিওথেরাপি দেওয়া যেতে পারে। তবে এ রোগের চিকিৎসায় সম্প্রতি ভ্যান্ডাটানিব বা সোরাফিনিব জাতীয় টারগেটেড থেরাপি ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাই শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, ভালো থাকুন।


লেখক: অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা
 পরামর্শক, রেডিয়েশন অনকোলজি, ইউনাইটেড হাসপাতাল

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *