ইদানিং খুব অল্প বয়সেই হুটহাট করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হৃৎপিন্ড দিবস পালিত হয়। তাই এই দিনটিকে সামনে রেখে আমাদের এখন থেকেই হৃৎপিন্ড ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া উচিত।
প্রতিদিন যে ভোজ্যতেল দিয়ে খাবার রান্না করি, তা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই তেল কতোটা স্বাস্থ্যকর ও হৃৎপিন্ডবান্ধব তা তেমন জানি না আমরা। এখন বাজারে অনেক ভোজ্যতেল পাওয়া যায় বলে কোনটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা বুঝে উঠাও কষ্টকর। তবে ভোজ্যতেল খাঁটি কি না, তা বোঝার সহজ এক উপায় হলো- রুমের তাপমাত্রায় ওই তেল জমে না গিয়ে তরল আছে কি না, তা দেখা। সনাতনী রান্নার তেল ছাড়াও পরিশোধিত রান্নার তেলই বেশি এখন। তবে কোন ধরনের রান্নার তেল স্বাস্থ্যকর, তাই আমরা এই লেখার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো।
রিফাইন্ড বা পরিশোধিত তেল কী?: প্রাকৃতিক তেলকে কিছু কেমিক্যালের মাধ্যমে পরিশোধন করে খাওয়ার উপযোগী করা হয়। এসিড, অ্যালকেলি বা ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে প্রাকৃতিক তেলকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা চালায় কোম্পানিগুলো। এছাড়া ক্যামিকেলের মাধ্যমে পরিশোধিত তেলকে নিউট্রালাইজ, ফিল্টার বা ডিওডোরাইজ করা হয়। কিন্তু যেসব ক্যামিকেল ওই তেলে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। অনেক ধরনের পরিশোধিত ভোজ্যতেল বাজারে পাওয়া যায়, যেমন- ক্যানোলা, সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার, অলিভ, পিনাট অয়েল।
পরিশোধিত তেলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: বিভিন্ন ক্যামিকেলের মাধ্যমে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক তেলকে পরিশোধন করা হয়, তাতে তেলের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পরিশোধিত তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি এসিড থাকে, যা শরীরে ব্যথা তৈরি করে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, পরিশোধিত তেল ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদরোগ সৃষ্টি করে। তেল পরিশোধনে যে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়, তা আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের নানা সমস্যা তৈরি করে। কেমিক্যালগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি করা ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বাধা দিতে পারে। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিজ চর্বির তুলনায় পরিশোধিত তেল হৃদরোগ সৃষ্টির জন্য বেশি দায়ী। এছাড়া যেহেতু প্রক্রিয়াজাত করার সময় পরিশোধিত তেলে বেশি ট্রান্স ফ্যাট থাকে, তাই এই তেল হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
প্রাকৃতিক তেলই আদর্শ? : ট্র্যাডিশনাল প্রাকৃতিক তেল ও পরিশোধিত তেল নিয়ে এক গবেষণায় জানা গেছে ঘি, নারকেল তেল বা সরিষার তেল পরিশোধিত তেলের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। ইন্ডিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় তাই পরিশোধিত তেল বর্জনের সুপারিশ করা হয়েছে। আর তাই স্বাস্থ্যসম্মত রান্না করতে হলে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, সয়াবিন তেল, অর্গানিক বাটার এসব বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে গবেষকরা রান্নার জন্য আদর্শ তেল হিসেবে এক্সট্রা লাইট অলিভ অয়েল বা সানফ্লাওয়ার অয়েলকে স্বীকৃতি দেন বেশি।
তথ্যসূত্র: বোল্ডস্কাই