শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক আর সেবিকার (নার্স) বেশিরভাগ পদ এখনও শূন্য। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেবার মান তলানীতে এসে দাঁড়িয়েছে। বেডের অভাবে রোগীদের মেঝেতে ঠাঁই মিলছে। নানা সমস্যার কারণে হাসপাতালটি থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। তবে বিত্তবানরা চিকিৎসা নিতে ৫০ কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে, ৮৫ কিলোমিটার দূরে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে, রাজশাহী অথবা রাজধানী ঢাকায় ছুটছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার ৬ লাখ মানুষের বিপরীতে মাত্র পাঁচ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে এ হাসপাতালটি। ৩১৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা, ১৩টি ইউনিয়ন। পাঁচজন ডাক্তার দিয়ে ৩৪৩টি গ্রামের প্রায় ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মানুষ কষ্ট করে উপজেলা সদর আসতে চায়না। তাই অসুখে বিসুখে এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ বাধ্য হয়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয়। এদিকে সরকারী হাসপাতালের দৈন্যদশার কারণেই উপজেলার আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। যদিও এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল ডাক্তার স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের পাঁচজন এমবিবিএস ডাক্তার পালাক্রমে ডিউটি করে থাকেন । এই পাঁচজন ডাক্তার কোনো কারণে ছুটি নিলে অন্য ডাক্তারদের বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে। আবার এ পাঁচ জন ডাক্তারের মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন আয়ুর্বেদ ডাক্তার রয়েছেন । বাকিরা সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তার। পাঁচ ডাক্তারের বিপরীতে রয়েছেন ১০ জন নার্স।
সূত্র আরো জানায় পূর্বের ৩১ শয্যার হাসপাতালের জন্য একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জিক্যাল), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), দুজন মেডিকেল অফিসার (ইউ এইচ সি) দুজন মেডিকেল অফিসার (ইউ এস সি), একজন মেডিকেল অফিসার (আয়ুবের্দিক) ও একজন ডেন্টাল সার্জনের মঞ্জুরী পদ রয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুযায়ী লোকবল ডাক্তার ও রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি দেয়া হয়নি। মান্ধাতার আমলের এক্সরে মেশিন ও ইসিজি মেশিন প্রায় সময়ই অচল থাকে বলে হাসপাতালে আগত একাধিক রোগীর অভিযোগ। এদিকে প্রসূতি মায়েদের জন্য আলট্রাসাউন্ড মেশিন জরুরি । এ যন্ত্রটির অভাবে প্রসূতি মাকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে এসে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে আলট্রাসাউন্ড করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখাতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জোবায়দা মেহের নাজের সাথে গত মঙ্গলবার কথা হলে তিনি জানান, চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের মধ্যেই হাসপাতার থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি জানান, হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবনের তিন তলায় সেমিনার কক্ষ, দোতলায় ১৯টি নতুন বেড স্থাপনের কথা থাকলে দুই বছর গড়িয়ে গেলেও ডাক্তার, বেড ও আসবাবপত্রসহ কোনো কিছুই এখনও পাওয়া যায়নি। রোগীর চাপ বেড়ে গেলে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের মেঝেতেই রোগীদের বিছানা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় সীমিত ডাক্তার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে রেগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এনেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের সবধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এখনও এ হাসপাতালটি থেকে প্রসূতি মায়েদের ডিএসএফ স্কীমের অধিনে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় । প্রসবকালীন কাউকে সিজার করতে হলে এনেসথেসিয়া করতে হয়। কিন্তু এখানে না থাকায় অন্য উপজেলা থেকে এনেসথেসিয়া ডাক্তার আনতে হচ্ছে । তাও আবার দুইদিনের বেশি এনেসথেসিয়া ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছেনা। এ সকল অসুবিধা দূর করতে বহুবার কর্তাব্যক্তিদের চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ড. জাহিদুল ইসলামের সাথে বুধবার সকাল পৌনে দশটায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান হাসপাতালে যথেষ্ট ডাক্তার রয়েছেন। এতেই চলবে। সূত্র কালের কণ্ঠ।