রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দালালচক্র। প্রায় ২৫০ দালালের দৌরাত্ম্যে রোগী ও তার স্বজনরা সব সময় থাকছেন ভীত-সন্ত্রস্ত। অসহায় রোগীরা তাদের কথা না শুনলে ভোগ করছেন হুমকি-ধামকি থেকে শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর মদদ ও যোগসাজশেই পুরো হাসপাতাল জুড়ে দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে দালালরা। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগের পুরো এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দালালরা। সব ওয়ার্ডের সামনে রোগী ও তার স্বজনরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে কয়েকজন দালাল টানাটানি করছে। রোগীদের এমন বিড়ম্বনায় পাশেই দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। অনেক দালাল প্রকাশ্যেই জানায়, সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা হাসপাতালে কাজ করে। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে সবাইকে টাকার ভাগ দেওয়া হয়। রোগীর স্বজন পরিচয়ে কৌশলে এ প্রতিবেদকের কথা হয় একাধিক দালালের সঙ্গে, যারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে এসেছিল নগরীর লক্ষ্মীপুরের আল্ট্রাপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এই দালালরা জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মাসোহারা দিয়েই সব কর্মকান্ডপরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের নেতা আল্ট্রাপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আরোগ্য নিকেতনের পলাশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলাশের মূল নাম ফজলুর রহমান। সম্প্রতি এই পলাশ সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য সংখ্যা ১০৭ থেকে বেড়ে ১৫০ জনে ঠেকেছে। তাদের মধ্যে রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে কাজ করে ৭২ জন, যাদের মধ্যে নারী দালালের সংখ্যা ২০ জন। সবাই শতকরা ৫০ শতাংশ কমিশনে কাজ করে।
এ কমিশনের টাকা আসে রোগীর কাছ থেকে আদায়কৃত অংশ থেকে। তবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অজুহাতে প্রতিটি দালালের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা কেটে রাখে সিন্ডিকেট প্রধান পলাশ।প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রের ১৫০ সদস্যের কাছ থেকেই সিন্ডিকেট প্রধান পলাশের প্রতিদিন অতিরিক্ত আয় ২২ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতিমাসে অতিরিক্ত আয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার, যার পরিমাণ বছরে গিয়ে হয় ৮১ লাখ টাকা। এদিকে শুধু এই সিন্ডিকেটের ১০৭ জন সদস্য নয়- বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও প্রায় ২৫০-এর মতো দালাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌসও বিষয়টি স্বীকার করে দাবি করেন, ‘দালালদের উৎপাত খুবই বেড়ে গেছে। আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে দালালদের ধরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দেই। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কারাগার থেকে তারা ঠিকই বের হয়ে আসে। দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু পারছি না। দালালদের দৌরাত্ম্য আর রোগীর স্বজনদের ভিড় যদি কমানো যেত তাহলে চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত করা সম্ভব হতো।’ সূত্রঃ বিডিপ্রতিদিন