প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রক্তের জন্য হাহাকার শোনা যায়। যখন যেখানে কেউ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রক্তের প্রয়োজন অনুভব করে সেখানেই ছুটে যান তারা। স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ করে দিয়ে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানোর কাজে সহযোগিতা করেন। মূলত এটি একটি সংগঠন। নাম ‘হিউম্যান ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’।
‘আমার রক্তে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, তবে আমি কেন করবো না রক্ত দান’ এই স্লোগানে ২০১৬ সালের ৪ মে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে হিউম্যান ব্লাড ডোনার্স ক্লাব। সংগঠনটির যাত্রা কুমিল্লা থেকে শুরু হলেও বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা রক্ত সংগ্রহ করছে। ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয় সদস্যদের চাঁদা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্থিক অনুদানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় তারা মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করে। বর্তমানে ফেসবুকে তাদের গ্রুপ মেম্বার ৫৩ হাজারেরও বেশি। দেশের প্রায় সকল জেলায় এই ক্লাবের সদস্য রয়েছে। কুমিল্লায় কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি শাখা কমিটি রয়েছে ঢাকা, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে। উক্ত অঞ্চলগুলোতে প্রতিমাসে ২-৩ বার বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ক্যাম্পিং করা হয়। রক্তদানের পাশাপাশি সংগঠনটি দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন, বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ, শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইফুল ইসলাম সংগঠনটির শুরু সম্পর্কে বলেন, ‘একবার আমার মা অসুস্থ হওয়ার পর ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের প্রয়োজন পরে। তখন আমি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও রক্ত পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত রক্ত পেলেও আমাকে খুব হয়রানির শিকার হতে হয়। তখন থেকেই ভাবলাম এমন কিছু একটা করা উচিত, রক্তের জন্য যাতে কাউকে হতাশ না হতে হয়। সেই চিন্তা থেকেই আমরা এই ব্লাড ডোনার্স ক্লাব গড়ে তুলি। স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বাংলাদেশের সকল জেলায় ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই। যাতে রক্তের জন্য কোনো মানুষের কষ্ট না হয়। এছাড়াও আমরা একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এতে আমরা অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে যেকোনো রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় সহযোগিতা করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, রক্ত দেওয়ার যে কি অনুভূতি, রক্ত না দিলে কেউ বুঝতে পারবে না। তারপরও বলবো রক্ত দিতে পারলে মানসিক প্রশান্তি ও আত্মতৃপ্তি অনুভব করা যায়। সংগঠনটির আরেক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেহেদী হাসান সৈকত বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা রক্তদান করে এবং রক্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সহযোগিতা করে সমাজে মানুষের সেবা করতে চাই।