জনবল সংকটে জামালপুর হাসপাতালে দুর্ভোগে রোগীরা

জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি প্রচন্ড রোগীর ভিড়ে নিজেই অসুস্থ। রোগীদের ভিড়ে দম নেয় দায়। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার রোগী সেবার পরিবর্তে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ডাক্তারদেরও ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে দেখা যায়। গতকাল সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শণে এমন চিত্র চোখে পড়ে। খবর নয়াদিগন্তের।

জেলার ৭টি উপজেলার ২৬ লাখ মানুষের এই হাসপাতালটিই স্বাস্থ্য সেবার শেষ ভরসা। হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারিসহ জনবল এবং চিকিৎসার যন্ত্রপাতিরও রয়েছে তীব্র সংকট। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারিদের দায়িত্বের অবহেলা, দুর্নীতি, অনিয়মসহ দালালদের দৌরাত্মে রোগীরা একদিকে যেমন জিম্মি, অন্যদিকে চরম দুর্ভোগের শিকার। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রোগী দেখার চেম্বার মাত্র ১০টি। প্রতিটি চেম্বারের সামনে দীর্ঘ লাইন। কয়েকটি চেম্বারে ডাক্তার না থাকায় সারিবদ্ধভাবে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিটি লাইনে নারী-পুরুষসহ প্রায় ২ থেকে আড়াইশ’ রোগীকে দীর্ঘ সময় গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মহিলাদের ফার্মেসিটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় বহি: বিভাগে নারী ও পুরুষ রোগীদের একটি মাত্র ফার্মেসি থেকে ভিড় ঠেলে ওষুধ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। ৩টি মাত্র টিকিট কাউন্টার থাকায় শিশু ও নারী রোগীদের টিকিট সংগ্রহেও দুর্ভোগ। জরুরি বিভাগে ডা. সৌমিত্র কুমার ভৌমিক জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে ৩ শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ রোগী ভর্তি হয়। 
সদর উপজেলার নান্দিনা থেকে আসা শিশু রোগী মোস্তাকিনের মা জানান, আমার ছেলের গলা ফুলে গেছে কিছু খেতে পারে না। অনেক দূর হতে এসে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডাক্তার আসেনি। 

এদিকে শিশু ওয়ার্ডের গিয়ে দেখা যায়, শহরের পাথালিয়া গ্রাম থেকে আসা রিহানের মা রিপু, মাদারগঞ্জ থেকে আসা রিফাতের মা জান্নাতুল ফেরদৌস এবং সদর উপজেলার নান্দিনা থেকে আসা সায়ার এর মা আশা জানান, দুপুর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওয়ার্ডে ডাক্তার আসেনি। তাদের বাচ্চাদের অবস্থা খুবই খারাপ। 
এ ব্যাপারে শিশু ডাক্তার তাজুল ইসলামের সাথে ওয়ার্ডের চেম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে শিশু রোগীর চাপ খুবই বেশি। প্রতি মাসে গড়ে ৭ থেকে ৮শ’ নবজাতক ও সহস্রাদিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হলেও সিট রয়েছে মাত্র ২৫টি। ডাক্তারের সংখ্যাও মাত্র ৩ জন। 

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহা জানান, এ হাসপাতালে ৯২ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও ৪৪টি পদ শূন্য রয়েছে। ২০৬ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও ২৪টি শূন্য পদ রয়েছে। অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদও খালি রয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি আইসিইউ উদ্ভোধন করলেও জনবল সঙ্কটে আজো চালাতে পারছি না। চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও সংকট রয়েছে। হাসপাতালে ১টি লিফট থাকলেও তা প্রায় সময় বন্ধ থাকে। বিশেষ করে একটি মাত্র সিসিইউ-এর অভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শত শত রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এদিকে রোগীদের চাপ বৃদ্ধি ও সেবা না পাওয়ার কারণে রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের সাথে প্রতিনিয়ত হট্টগোল, বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি লেগেই থাকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দুই একজন ডাক্তার, নার্স ব্যতিত অধিকাংশদের ব্যবহার আক্রমণাত্মক। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরা সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে। এদের হাতে শুধু রোগীরাই নয় অনেক সময় ডাক্তার, নার্সরাও লাঞ্ছিত হয়। রোগীদের সিট পেতে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা উৎকোচ না দিলে সিট পাওয়া যায় না। রোগীদের অভিযোগ খাবার মানও খুব নিম্নমানের। রাজনৈতিক ও এলাকার প্রভাবের কারণে দালালদের দৌরাত্মে সাধারণ রোগীদের প্রতিদিন পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। অনিয়ম, দুনীতি, অব্যবস্থাপনা, দুর্ব্যবহার, নিম্নমানের খাদ্য পরিবেশন ও দরিদ্র রোগীদের ওষুধ সরবরাহ না করাই যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনিয়মিতের কারণে কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই।
৭টি উপজেলার ২৬ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে সরকারের নিকট শীঘ্রই শূন্য পদগুলো পূরন করে ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *