‘ইচ্ছা হলো ঘুমিয়ে গেলাম’, আবার ‘না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম কয়েক দিন’, কিংবা ‘ঘুম হচ্ছে না বলে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতেই হয়’, ‘অনেক রাত জাগি, তাই পরদিন উঠতে অনেক দেরি হয়’—এর কোনোটিই স্বাস্থ্যকর নয়। ঘুম হচ্ছে না বলে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া ঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর ঘুমের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। একে বলা হয় ‘স্লিপ হাইজিন’। স্লিপ হাইজিন মেনে চললে স্বাভাবিক ভালো ঘুম হবে। নিয়মিত দৈনিক স্বাভাবিক ঘুম রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দৈনন্দিন জীবনে কাজের মানকেও বাড়িয়ে তোলে।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের কিছু নিয়মকানুন
• রাতে জেগে থাকা আর দিনে ঘুমানো পরিহার করুন। এতে করে ‘সারকাডিয়ান রিদম’ বা দেহঘড়িতে সমস্যা হয়, যা চিন্তা ও আচরণকে অস্বাভাবিক করে ফেলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মনে রাখবেন, দিনটা কাজকর্মের জন্য, রাত ঘুমের। তাই যত কাজই থাকুক, তা রাত গভীর হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে।
• চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে আর নির্দিষ্ট সময়ে জাগতে; এমনকি ছুটির দিনেও।
• দিনের বেলা ‘ভাতঘুম’ (ন্যাপ) না নিতে পারলে ভালো, তবে যদি নিতেই হয়, তবে ৩০ মিনিটের বেশি নয়।
• দিনের বেলা বিছানা বা সোফায় গড়ানো চলবে না, বিছানায় শুয়ে পত্রিকা বা বই পড়া, টিভি দেখা বা খাওয়ার অভ্যাস যেন গড়ে না ওঠে। বিছানা কেবল ঘুমের জন্য ব্যবহার করুন।
• দিনের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁটুন বা সাঁতার কাটুন বা সাইকেল চালান। অ্যারোবিক ব্যায়ামও করতে পারেন। তবে রাতে ঘুমের আগে খুব বেশি ব্যায়াম না করাই ভালো।
• সূর্য ডোবার পর চা-কফি পান এড়িয়ে চলুন। রাতের বেলা ভারী দুষ্পাচ্য খাবার কম খাবেন। খেয়েই ঘুমাতে যাবেন না, রাতের খাবার আর ঘুমাতে যাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা বিরতি রাখুন।
• ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে থেকে মুঠোফোন, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
• শয়নকক্ষের পরিবেশ ঘুমের উপযোগী হতে হবে, বিছানাটি হবে আরামদায়ক। অতিরিক্ত আলো বা ঘুটঘুটে অন্ধকার, দুটিই এড়িয়ে চলুন। ঘরটি যেন খুব শীতল বা খুব গরম না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। এসি ব্যবহার না করলে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। অতি উঁচু বা শক্ত বালিশ ব্যবহার করবেন না।
• সন্ধ্যার পর হালকা গরম পানিতে গোসল সেরে নিলে ভালো ঘুম হবে। তবে গভীর রাত করে গোসল করবেন না।
• ঘুম আসছে না বলে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাবেন না। বরং উঠে কিছুক্ষণ বই পড়ুন বা গান শুনুন।
• ‘ঘুম আসছে না’ বলে—কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবন করবেন না। চিকিৎসক যত দিন যে পরিমাণে ওষুধ খেতে বলেছেন, তার চাইতে বেশি কখনোই গ্রহণ করবেন না। বিষণ্নতা, উদ্বেগসহ নানা কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট