শজিমেক হাসপাতালে বাড়ানো হচ্ছে শয্যা সংখ্যা, হাসপাতালে লোকবল সংকট

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে অবকাঠামো স্থাপনা উর্ধমুখী হচ্ছে। বর্তমানের পাঁচ তলা ভবনকে সাত তলায় উন্নীত করে শয্যা সংখ্যা পাঁচশ’ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২শ’ ৫০টি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে এই হাসপাতালে চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদি থাকার পরও রোগীদের ভোগান্তি কমছে না। পরিষেবার মান উন্নত হয়নি। প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকছে দ্বিগুণের বেশি। হালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আহতদের বেশিরভাগই এই হাসপাতালে যাচ্ছে। রোগী সামলাতে ক্যাজুয়েলটি বিভাগকে হিমশিম খেতে হয়। চালু করা হয়নি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। অন্যদিকে ডায়লায়সিস মেশিনের অপ্রতুলতায় কিডনি রোগীদের সেবা বিঘিœত হচ্ছে। খবর জনকণ্ঠের।

উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ায় বাইপাস সড়কের ধারে ছিলিমপুরে ৫শ’ শয্যার শজিমেক হাসপাতাল চালু হয় ২০০৫ সালে। কথা ছিল এই হাসপাতাল সর্বোচ্চ উন্নত পরিষেবা দেবে। যা আজও হয়ে ওঠেনি। শজিমেক হাসপাতালের অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন। ক্যাথল্যাব, ম্যাগনেটিক রেজনন ইমেজিং (এমআরআই), কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যানসহ মানবদেহের বিভিন্ন জটিল পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

বছর কয়েক আগে কার্ডিওলজি বিভাগে হার্টের ব্লক নির্ণয়কারী এবং রিং পরানোর ক্যাথল্যাব (এ্যাঞ্জিওগ্রাম ও এ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি) ইউনিট চালু হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেয়ার লক্ষ্যে শজিমেক হাসপাতালে ১১টি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। পূর্বের বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত নতুন বিভাগগুলো হলো- নিউরো মেডিসিন ও সার্জারি, রেপেরেটরি মেডিসিন, নেফরোলজি, পেডেট্রিক নেফরোলজি, ইউরোলজি, হেমটোলজি, হেপাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি, ফিজিও মেডিসিন। তবে এই হাসপাতাল কোন বার্ন ইউনিট নেই। এসিড ও আগুনে পোড়া দগ্ধ রোগীদের কোন রকমে চিকিৎসা দেয়া হয় সাধারণ ওয়ার্ডের ১০টি শয্যাকে আলাদা করে। কথা ছিল এই হাসপাতালে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপিত হবে। তা আর হয়নি। দিনে দিনে কিডনি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। ডায়ালাইসিস যন্ত্র হাতে মাত্র ছয়টি। প্রয়োজন অন্তত ৩০টি। ফলে কিডনি রোগীদের সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে। ক্যাথল্যাবে এ্যাঞ্জিওগ্রাম করার পর ব্লক নির্ণিত হলে হৃদ রোগীদের রিং পরানোর যে লোকবল থাকার কথা তা নেই।

দেশে হৃদ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কার্ডিওলজি বিভাগে শয্যা সংখ্যা ২০। নিত্যদিন ৭০/৮০ জন করে হৃদরোগী আসছে। ইলেট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) ও ইকো কার্ডিওগ্রাম করে যে ফলাফল পাওয়া যায় তার ওপর ভিত্তি করে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দেন। কোন কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে বিপাকে পড়তে হয়। রোগীর অবস্থা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। হালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। আহত ও স্বজনদের ভিড় ও চাপ সামলাতে ক্যাজুয়েলটি বিভাগে যে লোকবল দরকার তা নেই। অন্য বিভাগের চিকিৎসক এসে সামাল দিতে হয়। ফলে অন্যান্য সেবার বিঘ্ন ঘটে। গুরুতর রোগীদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখতে হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকতে হয়। এমনিতেই হাসপাতালের নির্দিষ্ট সংখ্যার শয্যার অতিরিক্ত রোগী থাকে। বড় অংশকে শয্যার পাশে মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হয়। বাড়তি রোগীর সেবা দিতে যে লোকবল দরকার তা নেই। দশ তলার ভিতে নির্মিত হয় শজিমেক হাসপাতালের অবকাঠামো। পাঁচ তলা নির্মিত হওয়ার পর কথা ছিল শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে সকল বিভাগ চালু করতে পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল দশ তলায় উন্নীত করা হবে। বর্তমানে রোগী বেড়েছে, বিভাগ বেড়েছে। সেই ভাবনায় হাসপাতালকে সাত তলায় উন্নীত করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদফতর কাজ শুরু করেছে। ব্যয়ের প্রাক্কলন হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। শজিমেকের উপাধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানালেন, উন্নত ও আধুনিক এই হাসপাতালে রোগী সংখ্যা নিত্যদিনই বাড়ছে। সাত তলায় উন্নীত হওয়ার পর বর্তমানের শয্যা সংখ্যা ৫শ’ থেকে বাড়িয়ে ১২শ’ ৫০ শয্যা চাওয়া হয়েছে। শজিমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ ওয়াদুদ জানালেন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু না করায় দগ্ধ রোগীদের পরিষেবার বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ ব্যবস্থায় চালু করা ইউনিটে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনিও চলে গেছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *