অনেকে চোখ লাল হয়ে যাওয়াকে অবহেলা করে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরী করেন অথবা ইন্টারনেটের ভুবন ঘুরে নিজে নিজে চিকিৎসা করেন। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে যে কি কারণে চোখ লাল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার চোখ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে লাল হলে ভাইরাল ইনফেকশনের আই ড্রপস ব্যবহার করলে কাজ হবে না। এছাড়া রক্তনালি ফেটে গিয়ে চোখ লাল হলে এবং আপনি চিকিৎসা না নিয়ে ঘরে বসে থাকলে কি রকম জটিল পরিণতি হতে পারে ভেবে দেখেছেন? তাই আপনার চোখ লাল হলে এ অবস্থাকে চোখের চিকিৎসক দ্বারা মূল্যায়ন করাই ভালো। এ প্রতিবেদনে চোখ লাল হওয়ার ৯ কারণ ও চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।
* শুষ্ক চোখ
চোখ লাল হওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ হলো শুষ্ক চোখ। যখন একজন মানুষের চোখ শুকিয়ে যায়, চোখ উক্ত্যক্ত ও প্রদাহিত হয়- এই প্রদাহ চোখকে লাল করে। স্পেকস আপিল অপ্টোমেট্রির ডা. স্ভিটলানা ফিশার বলেন, ‘প্রায়ক্ষেত্রে শুষ্ক আবহাওয়াই হলো শুষ্ক চোখের কারণ, কিন্তু দীর্ঘসময় কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও চোখ শুষ্ক হতে পারে।’ ডা. ফিশার শুষ্ক চোখকে সাহায্য করতে আর্টিফিশিয়াল টিয়ারস বা কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
* অ্যালার্জি
ডা. ফিশার বলেন, ‘অনেক লোক এ বিষয়ে সচেতন থাকেন না যে চোখ লাল হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে তাদের পোষা প্রাণী। পোষা প্রাণীর লোমকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ছোট রেখে আপনার চোখকে চুলকানি ও প্রদাহ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।’ অন্যান্য যেসব অ্যালার্জি চোখকে লাল করে তা হলো মৌসুমী অ্যালার্জি ও ধূলো। আপনার ঘরকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন, বিশেষ করে সেই মৌসুমে যখন বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে পলেন বা পরাগ থাকে। ডা. ফিশারের আরেকটি পরামর্শ হলো, মেঝেতে কার্পেটের পরিবর্তে হার্ডউড ব্যবহার করা। প্রদাহ ছাড়াও অ্যালার্জির কারণে চোখ থেকে পানি পড়তে পারে। নিরাময়ের জন্য প্রতিদিন একাধিকবার চোখে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন অথবা অ্যালার্জির আই ড্রপস ব্যবহার করতে পারেন।
* কিছু ওষুধ
নিয়মিত সেবন করেন এমন অনেক সাধারণ ওষুধ চোখকে লাল করতে পারে। অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি, অ্যান্টি-অ্যানজাইটি পিল বা উদ্বেগ প্রশমনকারী ওষুধ এবং ইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ চোখের টিস্যুতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে চোখকে শুষ্ক ও লাল করতে পারে।
* ঋতুবন্ধ
ডা. ফিশার বলেন, ‘মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ বা মাসিক চক্রের সমাপ্তির কারণে চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের চোখ শুষ্ক ও লাল হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।’ এসময় হরমোনের পরিবর্তনশীল মাত্রা অথবা ভারসাম্যহীনতা চোখকে শুষ্ক করে এবং এটি চোখকে লাল করে। সমাধান হিসেবে অকুলার লুব্রিকেন্ট, আর্টিফিশিয়াল টিয়ার অথবা গরম সেঁক সুপারিশ করছেন ডা. ফিশার।
* ঘুমের ঘাটতি
আপনার চোখ সারারাত ধরে রিচার্জ হতে চায়, তাই প্রতিরাতে ৭/৮ ঘণ্টার কম ঘুমালে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। সাময়িক সমাধান হিসেবে আপনি ময়েশ্চারাইজিং আই ড্রপস ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে আপনাকে ঘুমের শিডিউল স্বাভাবিক করতে হবে এবং ঘুমের মান বাড়ানোর জন্য বিছানায় যাওয়ার এক ঘণ্টা পূর্বে টিভি বা কম্পিউটারের স্ক্রিনকে বিদায় জানাতে হবে।
* কন্টাক্ট লেন্স
কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারে আপনার চোখ লাল হতে পারে, শুষ্ক হতে পারে বা চুলকাতে পারে- কারণ আপনি প্রতিনিয়ত চোখকে স্পর্শ করেন ও কন্টাক্ট লেন্সটি শুকিয়ে যেতে পারে। চোখে সবসময় কোনোকিছু থাকলে চোখ উক্ত্যক্ত হতে পারে। যদি আপনি অস্বস্তির কারণে দীর্ঘসময় ধরে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে ব্র্যান্ড বদলের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
* ইনফেকশন
চোখে ব্যাকটেরিয়াল অথবা ভাইরাল ইনফেকশন হওয়া আনকমন কিছু নয়, বিশেষ করে শিশু ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের চোখে। সবচেয়ে পরিচিত একটি ইনফেকশন হলো কনজাঙ্কটিভাইটিস (যা পিংক আই বা চোখ ওঠা রোগ নামে বেশি পরিচিত)। ডা. ফিশারের মতে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনার সমস্যাটি পিংক আই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে বিলম্ব করা উচিত নয়- চোখ থেকে শ্লেষ্মা বের হওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখে ব্যথা অনুভব করা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অথবা আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা।
* অ্যালকোহল
অত্যধিক অ্যালকোহল পান করলে চোখের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে চোখ লাল হতে পারে। আপনার চোখের লাল ভাব কমাতে ভিসাইনের মতো আই হোয়াইটেনিং ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন- এটি চোখের রক্তনালিকে সংকুচিত করে লালতা দূরীকরণে সাহায্য করে।
* রক্তনালি ফেটে যাওয়া
চোখে প্রচুর প্রেশার বা চাপ পড়লে রক্তনালি ফেটে যেতে পারে। ডা. ফিশারের মতে রক্তনালি ফেটে যাওয়ার কারণে চোখ লাল হয়েছে কিনা তা বলা সহজ, কারণ সাধারণত একটি চোখে রক্তনালি ফাটে ও চোখটি লাল হয়। আপনার চোখের রক্তনালি ফেটে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে ভিজিট করুন।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট