অস্টিওপরোসিস একটি নীরব ঘাতক রোগ

অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক। হাড়ের ক্ষয়রোগ মানবদেহের বিভিন্ন হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর করে। শরীরে সব সময় ব্যথার অনুভূতি বাড়িয়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটিয়ে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।

হাড় গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৪০ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধি বেশি হয় আর ক্ষয় কম হয়। এর পর থেকে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়, বৃদ্ধি কম হয়। হাড়ক্ষয় নির্ভর করে ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হাড়ের ঘনত্বের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন ফাইবারের উপস্থিতি কেমন তার ওপর। তাই অল্প বয়সে স্বাস্থ্যসম্মত হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন বুড়ো বয়সে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সাধারণত মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, উচ্চতা অনুসারে যাদের ওজন কম, যারা নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সেবন করেন না, ধূমপায়ী ও মদ্যপান করেন, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে, থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি হলে হাড়ক্ষয়ের প্রবণতা বাড়ে। এই রোগের পারিবারিক ইতিহাসের ঝুঁকি বেশি। বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডায়াবেটিক, লিভার, কিডনি রোগে হাড়ের ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক। এই রোগ ঠেকাতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড়ক্ষয় কমায়। নিয়মিত পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার খাবেন, হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাবেন।

ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। কারণ, এতে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমে পিচ্ছিল ভাব দূর করুন। রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না। অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না। এ ছাড়া কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন, ভালো থাকুন।


লেখক: সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *