বারবার পিপাসা পাওয়া হতে পারে রোগের উপসর্গ

সারাক্ষণ পিপাসা লাগে? বারবার পানি পান করছেন, কিন্তু পিপাসা মিটছে না? নানা কারণেই হতে পারে এমনটা। বিশেষ করে খুব গরমের দিনে। তবে এটা কিছু রোগের উপসর্গও। আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে আছে পিপাসাকেন্দ্র বা থার্সট সেন্টার। কোনো কারণে শরীরে পানি বা লবণশূন্যতা দেখা দিলেই এই কেন্দ্র সংকেত পাঠায় পানি পান করার জন্য। পানি পান এবং প্রস্রাবের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে পানির ভারসাম্য। এবার দেখা যাক কেন বেশি বেশি পিপাসা পেতে পারে।

পানিশূন্যতা
খুব গরমের দিনে অনেক ঘাম হলে, ডায়রিয়া বা বমির পর, অনেক ব্যায়াম করলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। জিভ শুকাতে থাকে, বারবার পানি পান করার পরও মনে হয় পিপাসা আছে। যতক্ষণ না শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা রং গাঢ় হওয়া, চোখমুখ বসে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করাও পানিশূন্যতার লক্ষণ। গরম আর্দ্র আবহাওয়ায় নিয়মিত পানি ও তরল পান করে পানিশূন্যতাকে রোধ করলে এ সমস্যা আর হয় না।

ডায়াবেটিস
সবাই জানেন যে ডায়াবেটিসের অন্যতম লক্ষণ হলো বারবার পিপাসা লাগা। রক্তে শর্করা একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি হয়ে গেলে প্রস্রাবের সঙ্গে গ্লুকোজ বেরিয়ে যেতে থাকে, গ্লুকোজ সঙ্গে করে নিয়ে যায় অনেকখানি পানি। ফলে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হয়, বারবার পিপাসা পেতে থাকে। এর সঙ্গে বারবার প্রস্রাব হওয়া, দুর্বল লাগা থাকতে পারে। তবে মনে রাখবেন, রক্তে শর্করা রেনাল থ্রেসল্ড বা কিডনির গ্লুকোজ শোষণ ক্ষমতার ওপর না গেলে এই লক্ষণ হয় না। তাই সবারই এ উপসর্গ হবে না।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস
এটা সাধারণ ডায়াবেটিস নয়। এডিএইচ হরমোনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কের সার্জারির পর, কিডনির কিছু সমস্যায় এডিএইচ হরমোনের অভাব বা কার্যহীনতা হতে পারে। ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, এমনকি ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত প্রস্রাব হতে পারে ২৪ ঘণ্টায়। স্বাভাবিকভাবেই তখন বারবার পিপাসা লাগে।

মুখের শুষ্কতা
মুখ খুলে শ্বাস নেওয়া, লালাগ্রন্থির সমস্যায়, স্নায়ুজনিত সমস্যা বা কেমোথেরাপির কারণে মুখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে বারবার পিপাসা পেতে পারে।

ওষুধ
ডাই–ইউরেটিক গোত্রের ওষুধ বা ডায়াবেটিসের এসজিএলটি ২ ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ খেলে বারবার পিপাসা লাগতে পারে। ধূমপান, পান, জর্দা, অ্যালকোহলও মুখ শুষ্ক করে ও পানির পিপাসা বাড়িয়ে দেয়।

কী করবেন?
ভীষণ গরমে, খুব ঘামলে বা পরিশ্রম করলে পিপাসা পাওয়ারই কথা, এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে পিপাসা বেড়ে গেলে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করিয়ে নিন। পিপাসা উদ্রেককারী কোনো ওষুধ গ্রহণ করছেন কি না, জেনে নিন। মুখ, দাঁত বা লালগ্রন্থির কোনো সমস্যাও থাকতে পারে।


ডা. মৌসুমি মরিয়ম সুলতানা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *