ডেঙ্গু হলে কি হয়

ডেঙ্গু হলেই যে মানুষ মারা যাবে, তা কিন্তু নয়। আমরা ডেঙ্গুতে আতঙ্কগ্রস্ত হলেও এ সম্পর্কে বিস্তর জানলে আমাদের আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমবে। তবে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। 

ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর ২ থেকে ৭ দিন পর এসব উপসর্গ স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয়। এ রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো জ্বরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ বেড়ে যায়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব বা বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু যদি প্রথমবার আক্রান্ত করে এবং এটি যদি তরুণ ও শিশুদের হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। জ্বরও থাকে না, এ রকমও হতে পারে। টিপিক্যাল ডেঙ্গু বা ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকতে পারে। সংক্রমণের কোর্স তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: প্রাথমিক, প্রবল এবং আরোগ্য। 

প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে বেশি জ্বর, ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি, সঙ্গে থাকে সাধারণ ব্যথা ও মাথাব্যথা; এটি সাধারণত দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এই পর্যায়ে ৫০-৮০ শতাংশ উপসর্গে র​্যাশ বেরোয়। এটা উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে লাল ফুসকুড়ি হিসেবে দেখা দেয়। অথবা চার থেকে সাত দিনের মধ্যে হামের মতো র​্যাশ দেখা দেয়। কারও কারও মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে। 

কিছু লোকের ক্ষেত্রে অসুখটি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যার কারণে প্রবল জ্বর হয় এবং সাধারণত এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হয়। দেহে তরলের পরিমাণ কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। এই পর্যায়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকলতা এবং প্রবল রক্তপাত হয়, সাধারণত গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্ট হতে পারে। ডেঙ্গুর সব ঘটনার ৫ শতাংশের কম ক্ষেত্রে শক (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং হেমারেজ (ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার) ঘটে, তবে যাদের আগেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য স্টিরিওটাইপের সংক্রমণ ঘটেছে (সেকেন্ডারি ইনফেকশন), তারা বর্ধিত বিপদের মধ্যে রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন ফুসফুস ও পর্দার মধ্যে (প্লুরাল ইফিউশন) কিংবা পেটে সামান্য পরিমাণ পানি জমতে পারে। কিন্তু বেশি প্লাজমা লিকেজ হলে রক্তচাপ কমে যায় ও রোগী শকে চলে যায়। বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে ও মাল্টি অর্গান ফেইলিউর হতে পারে। ফুসফুস, কিডনি, হার্ট ইত্যাদি এর ব্যতিক্রম নয়। হার্ট ফেইলিউর বা কিডনি ফেইলিউর হলে বুকে পানি জমা, শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া ইত্যাদি জটিলতায় পড়তে পারে রোগী। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে তাই শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। ফুসফুসের অভ্যন্তরে বায়ুকুঠুরির মধ্যের পর্দা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়, ফলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় এবং কাশির সঙ্গে রক্ত এসে একই সঙ্গে দুই ফুসফুসের পর্দায় পানি আসার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। 

এরপর আরোগ্য পর্যায়ে বেরিয়ে যাওয়া তরল রক্তপ্রবাহে ফেরত আসে। এটি সাধারণত দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হয়। এই উন্নতি হয় চমকে দেওয়ার মতো, কিন্তু এতে প্রচণ্ড চুলকানি এবং হৃৎস্পন্দনের গতি ধীর হতে পারে। আরেক রকম র​্যাশও বেরোতে পারে ম্যাকুলোপাপুলার বা ভাস্কুলাইটিক রূপে, যার ফলে ত্বকে গুটি বেরোয়। এই পর্যায়ে তরলের অতিপ্রবাহ অবস্থা ঘটতে পারে। যদি এতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়, তাহলে সচেতনতার মাত্রা হ্রাস হতে অথবা মূর্ছা যেতে পারে। এরপর এক ধরনের ক্লান্তির অনুভূতি অনেক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। 

লেখক:  ডা. মো. আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *