বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতকে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। আদালত থেকে নির্দেশনা ও তাগাদা দেওয়ার পরও তারা ঠিকঠাক তথ্য সরবরাহ করছে না।
তথ্য মতে, গত ঈদুল ফিতরের আগে বিএসটিআই দেশের বাজার থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে পরীক্ষা করে। যেখানে প্রথম ধাপে ৫২টি নিম্নমানের পণ্য পাওয়া যায়। হাইকোর্টের নির্দেশে এই নিম্নমানের পণ্যগুলোর ৩৭টি উৎপাদকের বিরুদ্ধে ও ১৫টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এ বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। সুষ্ঠুভাবে মামলা পরিচালনার স্বার্থে নিম্নমানের যেসব নমুনা বিএসটিআই পরীক্ষা করেছে সেসব খাদ্যপণ্যের নমুনার একাংশ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য বিএসটিআইয়ের কাছে চাওয়া হয়।
নমুনাগুলো চেয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বিএসটিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে। এর আগে এক শুনানিতে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত থেকে সকল বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার নির্দেশ প্রদান করা হয় বিএসটিআইকে। যার পরিপ্রেক্ষিতেই বিএফএসএ চিঠি দিয়ে তথ্য চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছে।
তবে গত ১৭ জুন, বিএসটিআইকে চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রকার নমুনা দেয়নি বলে জানা গেছে। বিএফএসএর চিঠিতে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম, ঠিকানাসহ আরো কয়েকটি তথ্য চাওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিএসটিআইয়ের রেকর্ড বুক থেকে এসব তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু এই ১৫টি প্রতিষ্ঠানের যেসব তথ্য বিএসটিআই দিয়েছে তার মধ্যে ৯টি ঠিকঠাক হলেও বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠানের যেসব তথ্য সরবরাহ করা হয় সেগুলো সঠিক তথ্য নয়।
এ বিষয়ে এ মামলাগুলোর প্রসিকিউটিং অফিসার ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোহা কামরুল হাসান বলেন, ‘বিচারকের নির্দেশনা মোতাবেক নিম্নমানের পণ্যগুলো সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপনের জন্য বিএসটিআই সংগৃহীত নমুনা চাওয়া হয়। কিন্তু তারা একটি নমুনাও আমাদের দেয়নি। তাদের চিঠি দেওয়া হলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘১৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ভুল তথ্য দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সঠিক তথ্য না থাকাটা দুঃখজনক।’
বিএসটিআই তথ্য দিতে গড়িমসি করার কারণে আদালত থেকে মামলার বিবাদীরা সময় চেয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) মো. ইসহাক আলী বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে চিঠির জবাব দিয়েছি। এতে বলেছি, তিন মাস পার হলে কোনো নমুনা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস পরে নমুনাগুলো নষ্ট করে ফেলতে হয়। এর আগে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানাও সরবরাহ করা হয়েছে।’
বিএসটিআই তিন মাসের ব্যাখ্যা প্রদান করলেও বিএফএসএর কাছ থেকে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএসটিআই সময়ক্ষেপণ করেছে।
তবে এই বিষয়টির ব্যাখ্যায় কামরুল হাসান বলেন, ‘কোনো পণ্যের সমস্যার কারণে মামলা হলে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নমুনা সংরক্ষণ করতে হয়। যেসব নমুনা পরীক্ষায় ভালো পাওয়া যায় সেগুলো তিন মাসের মধ্যে নষ্ট করে ফেলার নিয়ম রয়েছে।’
বিএসটিআইয়ের বিরুদ্ধে আগে বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের অপরাধে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের (জিএসকে) একটি পণ্য হরলিক্সের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সে সময় হরলিক্সকে কিভাবে দেশের বাজারে ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আদৌ কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত থেকে। সে সময়েও প্রতিষ্ঠানটি কোনো তথ্য দেয়নি। বর্তমানে মামলাটি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত থেকে উচ্চ আদালতে নেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ