দিন দিন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চিকিৎসা সেবায় আস্থা অর্জন করেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। প্রায় সময় এ হাসপাতালে চারগুণ বেশি রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের সেবা দেয়ার চিকিৎসক সঙ্কট এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বর্তমানে হাসপাতালের অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ ২২৪টি পদের বিপরীতে তিন শিফটে কর্মরত মাত্র ৯৯ চিকিৎসক। এরমধ্যে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন শেবাচিম হাসপাতালে। ওইদিন হাসপাতালের আন্তঃবিভাগেই এক হাজার ৯৭৯ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
সূত্র মতে, ১৯৭০ সালে শেবাচিম হাসপাতালে ৩২৪ শয্যায় রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সেটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করেন। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের সেবায় আউটডোর-ইনডোরে মোট ২৮টি বিভাগে রয়েছে ৪৪টি ইউনিট। দিন যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। তাই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), স্ক্যান (এনআইসিইউ), বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, গ্যাসট্রো অ্যানটোলজি, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, নিউরো সার্জারি, পেডিয়াটিক সার্জারি, ইউরোলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, গাইনি, অবস্টেট্রিকস, শিশু রোগ, নিউনেটোলজি, আইসোলেশন ও মানসিক রোগ বিভাগে শয্যা না পেয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে। হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু চলতি বছরে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর সাত লাখেরও বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নেবেন এ হাসপাতাল থেকে। যার অন্যতম উদাহরণ শনিবার হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে চিকিৎসাধীন এক হাজার ৯৭৯ রোগী। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছরে এই প্রথম। শনিবার ভর্তি হওয়া এক হাজার ৯৭৯ রোগীর মধ্যে ৪৯১ শিশু রোগী। এছাড়া মেডিসিন বিভাগের চারটি ইউনিটে রয়েছে ৪৫৬ ও সার্জারি বিভাগের চারটি ইউনিটে রয়েছে ২৭২ রোগী। পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ১৮৩ রোগী।
অপরদিকে হাসপাতালকে এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেয়া হলেও সাত বছর ধরে পাঁচ শ’ শয্যার জনবলসহ অর্গানোগ্রামেই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সেখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর তীব্র সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসক সঙ্কট চরমে।
শনিবার (আগস্ট ২৪)হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মকর্তাসহ ২২৪টি পদের বিপরীতে তিন শিফটে কর্মরত ছিলেন মাত্র ৯৯ চিকিৎসক। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসক সঙ্কট কিছুটা কম থাকলেও আন্তঃবিভাগে এ সঙ্কট আরও চরমে। এ বিভাগে ৩৩ রেজিস্ট্রার পদে ১৮টি শূন্য, ৬৬টি সহকারী রেজিস্ট্রার পদের ৪৮টি, ১০টি অ্যানেসথেসিওলজিস্ট পদে চারটি, ১০টি ইএমও পদের দুটি, ২০টি মেডিক্যাল অফিসার পদের ১৮টি ও ২০টি ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার পদের ১১টি শূন্য রয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে হাসপাতালের আউটডোরের চিকিৎসকদের পদের ক্ষেত্রেও। প্রতিদিন আউটডোরে তিন হাজারের অধিক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন হাতেগোনা কয়েক চিকিৎসক। বহির্বিভাগের ৪৬ এমও, সহকারী সার্জন ও ডেন্টাল সার্জনের মধ্যে ২২টি পদই শূন্য। একইভাবে প্যাথলজি বিভাগের আটটি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের তিনটি পদই শূন্য। আর সেখানেই প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শ’ রোগীর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্স ও কর্মকর্তাদের ৮০৬টি বিভিন্ন পদের মধ্যে মাত্র ৩৭টি পদ শূন্য থাকলেও তৃতীয় শ্রেণীর ১০২টি পদের মধ্যে ৩১টি ও ৪২৬টি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদের মধ্যে ১১৮টি পদই শূন্য রয়েছে। এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন বলেন, বিপুল পরিমাণ রোগীর সেবার দায়িত্বে থাকা পদের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসকসহ জনবল নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকসহ জনবল সঙ্কটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুরে দেড় বছর ডাক্তার নেই
নিজস্ব সংবাদদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, উপজেলার ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় দেড় বছর যাবত ডাক্তার আসেন না। এতে এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী সরকারী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া উপস¦াস্থ্য কেন্দ্রটি থেকে রোগীরা প্রয়োজনীয় ওষুধও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে এলাকার দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ফতেপুর বাজারে চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে এলাকার মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পেয়ে থাকতেন। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে সরকার ফতেপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। নিয়ম অনুযায়ী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এমবিবিএস ডাক্তার শামীমা হোসেন প্রায় দেড় বছর যাবত আসেন না। এছাড়া এমএলএসএস পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সুভাষ চন্দ্র তন্ত্রী ও ফার্মাসিস্ট আব্দুল কাদের। ফার্মাসিস্ট আব্দুল কাদেরকেও মাঝে মধ্যে ডেপুটেশনে নেয়া হয় বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। এদিকে দীর্ঘদিন ডাক্তার না আসায় জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রায়ই ফিরে যাচ্ছে।
এতে এলাকার মানুষ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম আহমেদ বলেন, আমি যোগদানের অনেক আগে সিভিল সার্জনের নির্দেশে ফতেপুুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত ডাক্তার শামীমা হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে আনা হয়েছিল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও তিনি নিয়মিত আসেন না বলে তিনি জানান।
সূত্রঃ জনকণ্ঠ