ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশের আনাচকানাচেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ, এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল এগিয়ে এসেছে এবং লম্বা হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকসহ অনেকে মারাও গেছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চদ্র রায় বলেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সে জন্য জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম হবে। জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি-কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোনো সমস্যা থাকে, সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে। আবার একই সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর ও অন্য সমস্যাও হতে পারে। আবার ডেঙ্গু জ্বর নেমে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। কারণ, জ্বর–পরবর্তী সমস্যায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।
কী খাবেন?
প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাওয়ার স্যালাইন। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার এই সময়ে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
যেসব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। আরও কিছু ওষুধ আছে যেগুলো বন্ধ করতে হতে পারে। অর্থাৎ কী ওষুধ খাওয়া যাবে আর কী ওষুধ খাওয়া যাবে না, তা চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিক করুন।
প্লাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট বা রক্তকণিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি শরীরের কোনো অংশ দিয়ে রক্তপাত না হয়, তবে প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কখন প্লাটিলেট দিতে হবে, সেই বিষয়টি বরং চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা
মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে পারে। যাদের এখনো ঋতুস্রাব হয়নি, তাদেরও এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তা শুরু হয়ে যেতে পারে। এমন হলে অবশ্যই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসককে জানাতে হবে। তা না হলে প্রচুর রক্তপাত হতে হতে রোগী শকে গিয়ে মারাও যেতে পারে।
ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। ভাগগুলো হচ্ছে এ, বি এবং সি।
প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হতে পারে, জন্ডিস দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় জ্বর ভালো হয়ে যায় কিন্তু রক্তচাপ কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হতে হবে।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে
জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। জ্বর ভালো হলেও বিশ্রামে থাকতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু জ্বর–পরবর্তী সমস্যা তাতে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কত দিন বিশ্রাম নিতে হবে তা ডেঙ্গু–পরবর্তী সমস্যার তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে। তাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।