উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পরিক্রমায় বিশ্ব প্রতিবেদনে অনেক কিছু স্পষ্ট হলেও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ভিন্নমত এসেছে।
দেশের জনগণের স্বাস্থ্য খাতের মাথাপিছু ব্যয় ৩২ ডলার মাত্র; সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অবস্থান বেশ ভাল। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের এই হিসেবে পঞ্চম। ৩৮ ডলার খরচ করে পাকিস্তান এগিয়ে চতুর্থ স্থানে। আর ভারত মাথাপিছু ৫৯ ডলার ব্যয় করে। শ্রীলঙ্কা ১৫১ ডলার ব্যয়ে প্রথমে। নেপাল খরচ করে ৪৫ ডলার। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ মোট উৎপাদনের মাত্র এক শতাংশেরও কম খরচ করে স্বাস্থ্য পরিষেবায়। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে, সরকারীভাবে স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব না দেয়ার কারণে ব্যয় বরাদ্দও বাড়ানো হয়নি। পুরো বিষয়টি জাতির জন্য দুঃখজনক। প্রতিবেদনে এও উঠে এসেছে যে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিজের ব্যয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা করে যাচ্ছে। সার্বিক জীবনযাত্রার মান বাড়ায় স্বাস্থ্য খাতেও ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যা প্রতিনিয়তই সামলাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা নিতে আরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সাম্প্রতিক ডেঙ্গু প্রতিরোধ না করতে পারাই এর প্রমাণ। অন্যান্য অনেক খরচের সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবায় বয়ে করতে গিয়ে তারা শুধু হিমশিমই খাচ্ছে না, আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছে। অন্য অনেক খাতে বাংলাদেশের ব্যয়বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির নিরিখে স্বাস্থ্য সূচকে তা কমার পর্যায়ে নির্দেশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে যে খরচ হয় অসুস্থ আর বিপন্ন রোগীদের তার ৬৪ ভাগই নিজেদের বহন করতে হয়। চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই শুধু নয়, ওষুধপত্র কিনতে যে পরিমাণ অর্থ সঙ্কুলান করতে হয়, তার ৬৪ ভাগই চাপে অসুস্থ রোগীদের মাথায়। এক জরিপে এমন দুরবস্থাও উঠে এসেছে যে, হতদরিদ্র মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজেদের আরও বিপন্ন অবস্থায় ফেলছে।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান কাঠামোটি দুর্বল। সারা বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তনে প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ফলে রোগের ধরন এবং উপসর্গেরও পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বিশ্বব্যাংক থেকে পরামর্শ এসেছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি থেকে শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থপনাকে আনুষঙ্গিক শর্ত হিসেবে বিবেচনায় এনে এই বিশেষ খাতকে জনবান্ধব করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। স্বাস্থ্য সেবার ব্যয়ভার বাড়াতে বিভিন্ন অর্জনকে সমন্বিত করে আরও বৃহত্তর প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
গত দশ বছরে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দ্বিগুণ বেড়েছে। শুধু তাই নয় শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, মেয়েদের বিদ্যালয় প্রবেশ, স্যানিটেশন সুবিধা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ স্বাস্থ্য পরিসীমাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যা স্বাস্থ্য খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশ এখন ওষুধ তৈরিতেও সফলতা অর্জন করে এবং সামান্য খরচেই ওষুধ সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটায়। এটাও স্বাস্থ্য সেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার পরেও এই কথা অনস্বীকার্য, বিশাল স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে সরকারী বরাদ্দ বাড়াতে না পারলে সমস্যা যে তিমিরে সেখানেই থেকে যাবে।
সূত্রঃ জনকণ্ঠ