ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়ত পরিস্থিতি এমন হতো না। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা (সিটি কর্পোরেশন) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপাচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন হতে হবে- এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের এমনটা ভাবার কোন সুযোগ নেই। রবিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম প্রতিবেদন আকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবহিত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকল সরকারী হাসপাতালে ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৪০ হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারী নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলে, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুই রকম তথ্য দেখছি। সরকারী হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারী হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২ জন। এটা নিয়ে দুই রকম তথ্য কেন?’ জবাবে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘সরকারী হিসাবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারও কারও অন্য রোগ থাকতে পারে। কারও হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’ এ সময় আদালত বলে, ‘ধরে নিচ্ছি, ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কি অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে হয়ত এত লোককে মরতে হতো না। গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের আদেশের পর দুই সিটির কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ধরনের কথাবার্তা শুনলাম তা কারও কাম্য নয়। ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলে, ‘আমরা তো কোন রুল জারি করিনি। আরেকটি বেঞ্চ রুল জারি করেছে। সেখানে প্রতিবেদন জমা দিন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এই আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিল। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছে। আদালত বলে, ‘এটা নিয়ে আমরা কোন আদেশ দিচ্ছি না।’