‘হার্ট অ্যাটাক’ আর ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ দুই ধরনের রোগ। এই দুইয়ের পার্থক্য বুঝতে হলে হার্ট অ্যাটাক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময়ে শরীরে ঠিক কী ঘটে, সেটা বোঝা জরুরি।
হার্ট অ্যাটাক কী?
করোনারি ধমনির মধ্যে যখন একটি ব্লক তৈরি হয়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। এই ধমনিগুলোর মধ্য দিয়ে রক্ত কার্ডিয়াক পেশি পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। যেহেতু হৃৎপিণ্ড একধরনের পেশি, সুতরাং তার কাজের জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত। যখন করোনারি ধমনিতে ব্লকেজ তৈরি হয়, হৃৎপিণ্ডে প্রয়োজনীয় রক্ত আসা বন্ধ হয়ে যায় বলে হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি ধমনিগুলোর ব্লকেজ দ্রুত অপসারণ করা না যায়, তাহলে হৃৎপেশি মরে যেতে শুরু করে।
হার্ট অ্যাটাকের পর কী হয়?
হার্ট অ্যাটাকের সময়ে প্রচণ্ড বুকব্যথার অনুভূতি হয়। এর সঙ্গে বুকে প্রচণ্ড চাপ, বুক দুই পাশ থেকে চেপে আসা ইত্যাদি সমস্যা অনুভূত হয়। কেউ কেউ বাম কাঁধ, বাম বাহু থেকে শুরু করে শরীরের বাম দিকের ওপরের অংশেও ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে যেমন হয়, হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড তেমন হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেয় না।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
হৃৎপিণ্ড যখন হৃৎকম্পন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। হৃৎপিণ্ডে হঠাৎ গোলযোগের ফলে এটি হয় এবং এর ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হতে শুরু করে। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এর প্রাথমিক পার্থক্য এটাই যে হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃৎপেশিতে রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলেও হার্টবিট থেমে যায় না।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর কী হয়?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে যেহেতু হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়, তাই প্রথমেই মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া না গেলে, এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার মানুষের মাত্র কয়েক মিনিটেই মৃত্যু হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ:
১. অতিরিক্ত ওজন
২. হৃদ্রোগের পারিবারিক ইতিহাস
৩. উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার
৪. ডায়াবেটিস
৫. শারীরিক ব্যায়াম আর পরিশ্রম না করা
৬. বেশি সময় ধরে বসে থেকে কাজের অভ্যাস
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ:
১. উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ওষুধ ব্যবহার
২. হৃদ্রোগের ওষুধ সেবন
৩. কোনো কারণে হৃৎপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
৪. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন অথবা হৃৎকম্পনজনিত কোনো ধরনের সমস্যা
জরুরি কথা:
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি এড়াতে হৃৎপিণ্ডের নিয়মিত চেকআপ ও স্ক্রিনিং জরুরি। রোগীর জীবন বাঁচাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের বেলায় রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। জরুরি চিকিৎসার আগপর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে রোগী যদি অচেতন হয়ে যায় তাহলে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর শুরু করতে হবে। যদি ডাক্তার অন্য কোনো ওষুধ না বলেন, তাহলে রোগীকে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে।
তবে মনে রাখবেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে অনুবাদ করেছেন দেবদ্যুতি রায়
সূত্রঃ প্রথম আলো