কখনো কখনো এমন হতে পারে যে, আপনি পানি ছাড়াই ওষুধের বড়ি গেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ আপনি তাড়াহুড়োর মধ্যে আছেন অথবা এতই অলস যে ডেস্ক থেকে ওঠতে চাচ্ছেন না অথবা আশপাশে পানি নেই। কিন্তু এটা জেনে রাখা ভালো যে, পানি ছাড়া ওষুধ গেলা বিপজ্জনক হতে পারে, এমনকি প্রাণনাশকও।
পানির সঙ্গে ওষুধের বড়ি সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ- কারণ এটি কেবলমাত্র ওষুধ গেলাই সহজ করে না, খাদ্যনালিতে ওষুধের বড়ি আটকে যাওয়াও প্রতিরোধ করে। খাদ্যনালিতে ওষুধের বড়ি আটকে গেলে অস্বস্তির চেয়েও মারাত্মক কিছু হতে পারে। এ প্রসঙ্গে রোওয়ান ইউনিভার্সিটি-স্কুল অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিনের ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার কডল বলেন, ‘খাদ্যনালিতে আটকে থাকা ওষুধ প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এটি বুকজ্বালা, বুক ব্যথা, ইসোফ্যাজাইটিস বা খাদ্যনালিতে প্রদাহ অথবা এমনকি রক্তক্ষরণ ও ছিদ্রের কারণ হতে পারে।’
যেহেতু খাদ্যনালির অংশসমূহে কোনো পেইন নার্ভ নেই, তাই আপনি সবসময় তাড়াতাড়ি উপসর্গ অনুভব করবেন না- একারণে ওষুধের বড়িটি আপনার পাকস্থলিতে পৌঁছেছে কিনা তা জানা কঠিন হতে পারে। কিছু লোক বুকব্যথা বা বুকজ্বালার মতো অনুভব করেন, তাই তারা এই অনুভূতিকে সাময়িক অস্বস্তি ভেবে অবহেলা করে থাকেন। সময় পরিক্রমায় গলায় আটকে থাকা ওষুধ খাদ্যনালির স্পর্শকাতর টিস্যুকে ড্যামেজ করতে পারে, যার ফলে যন্ত্রণাদায়ক রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজ অথবা তীব্র পানিশূন্যতা হতে পারে- এসবকিছু খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
টার্কিশ জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রায় সকল ধরনের ওষুধ খাদ্যনালিতে আলসার সৃষ্টি করতে পারে। ডা. কডলের মতে, কিছু কমন ওষুধ খাদ্যনালিতে উল্লেখযোগ্য ড্যামেজ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন- অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ। তিনি যোগ করেন, ‘কিছু লোক ব্যথা উপশম করতে পানি ছাড়াই ইবুপ্রোফেন সেবন করেন, কিন্তু এই ওষুধ গলায় আটকে গেলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।’ নিউ জার্সিতে অবস্থিত মরিসটাউন মেমোরিয়াল হসপিটালের একজন সার্জন এক কিশোর ফুটবলারের একটি গল্প বলেন- কিশোরটি প্রত্যেক খেলার পূর্বে পানি ছাড়াই দুটি ইবুপ্রোফেনের বড়ি সেবন করতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- তার খাদ্যনালি সুইস চিজের মতো হয়ে গেছে, অর্থাৎ তার খাদ্যনালিতে অনেকগুলো ছিদ্র পাওয়া গেছে। চিকিৎসকেরা জানান যে পানি ছাড়া ইবুপ্রোফেনের বড়ি সেবন করার কারণেই এসব ছিদ্র হয়েছে। ভিটামিন সি ও আয়রন সাপ্লিমেন্টও বিশেষ সমস্যাপূর্ণ হতে পারে।
ডা. কডলের পরামর্শ হলো, ওষুধের বড়ি সেবনের সময় বিপজ্জনক জটিলতা এড়াতে আট আউন্স বা এক গ্লাস পানি পান করুন। তিনি আরো বলেন, ‘দাঁড়িয়ে অথবা বসে ওষুধের বড়ি গিলুন, কখনো শুয়ে নয়। ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক পূর্বে ওষুধ সেবন করবেন না অথবা ওষুধ সেবন ও বিছানায় শোয়ার মধ্যে ন্যূনতম ১৫ মিনিটের ব্যবধান রাখুন, যেন ওষুধের বড়ি খাদ্যনালি থেকে পাকস্থলিতে চলে যেতে পারে। পানি পান না করলে সবসময় যে ওষুধের বড়ি গলায় আটকে যাবে এমন কোনো কথা নেই, কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পুরো এক গ্লাস পানি পান করা উচিত।’
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট