ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিবছর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়ে থাকে। গত ১৮ বছরের সরকারী পরিসংখ্যানে এই তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। এ বছর জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছে অস্বাভাবিক ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হিসেবে পরিচিত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস।
গত ১৮ বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি বছরেও এই পিক মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের পুনরাবৃত্তি ঘটলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। আর আগস্ট মাসের গত চার দিনেই প্রায় সাত হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের চিত্রটি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া, ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়া, ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণের সঙ্কট, কার্যকর এডিস মশক নিধন কার্যক্রমের অভাব এবং সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ইত্যাদি কারণও ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়টি মানুষ জানলেও এর যে গতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতনতা নেই অনেকের। অনেক চিকিৎসকেরও এ বিষয়ে ভাল ধারণা নেই। ফলে সবাইর এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪)। সাধারণত একবার এক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময় আরেকটি দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারও হয়ত ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, কিন্তু ঠিক কোন্ টাইপের ডেঙ্গু তা শনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি টাইপিং বের করাটাও জরুঈ। না হলে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গুর অবস্থা তুলে ধরে অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর ডেঙ্গু, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম -এই কয়েক ধরনের হয়। ক্লাসিক্যাল বা সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর হয়, যা ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বর দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সঙ্গে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি বা গিঁটে ব্যথা, শরীরে র্যাশ থাকতে পারে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হলে তেমন সমস্যা নেই, এতে মৃত্যুর মতো ঘটনা সাধারণত ঘটে না।
আর ডেঙ্গু হেমোরেজিকে জ্বর কমে যাওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল র্যাশ বা রক্তবিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাড়ি বা নাক দিয়ে আপনা-আপনি রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, কালো রঙের পায়খানা, ফুসফুসে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদি। রক্ত পরীক্ষা করালে দেখা যায়, রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি, যাতে শরীর থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের উপসর্গগুলোর পাশাপাশি রোগীর রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, হাত-পা শীতল হয়ে আসে, রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া উচিত। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত বা অণুচক্রিকাও দিতে হতে পারে। তবে সবার যে এমন হবে, তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ।