ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। অবস্থা এমন যে হাসপাতালগুলো স্থান সংকুলান করতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ছুটতে হবে, এমন নয়। অকারণে হাসপাতালে ভিড় করলে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হতে পারে। কাজেই জেনে রাখা ভালো, রোগীকে কখন কেন হাসপাতালে নেওয়া জরুরি।
ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রোগের সূচনা ঘটে। প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, হাড় ও পেশিতে ব্যথা হয় এ সময়। অরুচি ও বমি বমি ভাবও হতে পারে। এবারের ডেঙ্গুতে ত্বকে র্যাশ বা দানা তেমন দেখা যাচ্ছে না। জ্বর হওয়া মাত্রই হাসপাতালে ছোটাছুটির দরকার নেই। তবে জ্বরের প্রথম তিন-চার দিনের মধ্যে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ও ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানো উচিত। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথম পাঁচ-ছয় দিন বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে পারেন। এ সময় প্রচুর পানি ও তরল পান করবেন, পুষ্টিকর খাবার খাবেন, বিশ্রাম নেবেন। তবে অনেক বমি হওয়া ও বমির জন্য কিছু খেতে না পারা, অস্থিরতা ও অস্বাভাবিক আচরণ, তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদির মতো উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হতে পারে। এ ছাড়া শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়োবৃদ্ধ, ডায়াবেটিস রোগ, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগ রয়েছে—এমন রোগীদের শুরু থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হতে পারে। এবার অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে এর তীব্রতা বেশি। পরে জ্বর সারতে না সারতেই অনেকে দ্রুত ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের জটিলতায় পড়ছেন। তাই জ্বর সেরে যাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
ডেঙ্গুর ক্রিটিক্যাল ফেজ বা জটিল অবস্থা শুরু হয় জ্বর সেরে যাওয়ার পর। কাজেই জ্বর কমার পরও সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন। চিকিৎসকের কাছ থেকে সতর্কসংকেতগুলো ভালো করে জেনে নিন। সতর্কসংকেতগুলো হলো: রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাত-পা শীতল হয়ে আসা, চিকন ঘাম, অস্থিরতা ও অসংলগ্ন আচরণ, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস বা পেটে পানি আসা এবং শরীরের যেকোনো স্থানে অস্বাভাবিক রক্তপাত। আরেকটি লক্ষণ হলো প্লাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে যাওয়া ও হিমাটোক্রিটের পরিবর্তন। এ ধরনের জটিলতায় রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত। ক্রিটিক্যাল ফেজ ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেটে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অবস্থা আরও জটিল হতে পারে। শক সিনড্রোম হতে পারে, বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে মাল্টি অরগান ফেইলিউর (একাধিক অঙ্গ অকার্যকর) হতে পারে। আবার রক্তক্ষরণ, কিডনি বা হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, যকৃতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে রোগীকে।
সুত্র ঃ প্রথম আলো