বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর শতশত মানুষ এখন ছুটছেন হাসপাতালগুলোতে – কেউ রোগী হিসেবে ভর্তি হতে, কেউবা ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে।
তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার ভয় এখন শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের ডাক্তার আর নার্সদের মধ্যেও।
পরিস্থিতির ব্যাপকতা বোঝা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দেখে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৭০০’র বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল দায়িত্বরত নার্সরা রোগীদের বারবার তাগাদা দিচ্ছেন মশারি টাঙানোর জন্য।
নার্স মনি আক্তার বলেন, “আমরা নিজেরাও তো ভয়ে আছি। যেমন এই পেশেন্ট মশারি টানালো না। তাহলে কী হবে? মশা কামড় দিবে। তখন পাশের আরেকটি ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। এই যে আমরা কাজ করতেছি, সেজন্য আমরাও তো সেফ না।”
সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার এবং নার্সরা এখন বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি মুহূর্তেই রোগী আসছেন এসব হাসপাতালে।
সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিবিসি বাংলাকে বলেন, সাধারণ তারা একদিনে যত সংখ্যক রোগী দেখতেন, এখন তার তিনগুণ বেশী রোগী দেখতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার আশংকা নিয়ে তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তত দুইজন ডাক্তারের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এ বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
সব হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেও সবচেয়ে বেশী রোগী ছুটছেন সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এসব হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালের বারান্দায়ও রোগীদের ঠাই হওয়া মুশকিল।
“এটা আপনারা এখন জাস্টিফাই করবেন যে ডাক্তাররা আসলে কাজ করেন নাকি করেন না?” – প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক আইরিন নবী।
শুধু সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নয়, তার কাছেই ঢাকা শিশু হাসপাতালেও একই চিত্র।
এই হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ সেন্টারের সাথে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিন প্রায় দেড়শোর মতো শিশুকে আনা হচ্ছে। তাদের বাবা-মা শিশুর শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করে জানতে চান, শিশুটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কিনা?
শিশু হাসপাতালের এক ডাক্তার বলেন, “বিষয়টা যদিও আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর, তারপরেও তো আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।”
শিশু হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সেন্টার থেকে জানানো হয়, প্রতিদিন যত শিশু আসছে তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এই সন্দেহে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন শতশত মানুষ আসছেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। ফলে রক্ত পরীক্ষার জন্য চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।
এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন হাসপাতালে শুধু রক্ত পরীক্ষার জন্যই ল্যাবরেটরিতে বাড়তি লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রয়োজনের তুলনায় সেটি অনেক কম বলে মনে করছেন হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
ফলে হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের এখন অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে।
“পেশেন্ট বাড়ার সাথে-সাথে কাজ বাড়বে, এটাই তো নরমাল। কিন্তু ডেঙ্গু পেশেন্ট আসার কারণে কাজ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে,” বলছিলেন নার্স মনি আক্তার।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতাল-মুখী স্রোত থামছেই না। এ সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আর ১০-১১ দিন পরেই বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ঈদের ছুটির সময়ে হাসপাতালের জরুরী কার্যক্রম সীমিতভাবে হলেও চালু থাকে।
তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আসন্ন ঈদের সময়টাতেও হয়তো অনেক চিকিৎসক ও নার্সের শেষ পর্যন্ত ছুটি মিলবে না, কারণ অবস্থা সামাল দিতে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সুত্র ঃ বিবিসি