শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকরী উপায়


মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।

এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।

মানুষ সচরাচর যে ধরণের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে – শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার।

এ ধরণের খাবার শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর উপর।

দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি।

মানুষের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়।

বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।

দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোন ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।

তিনি বলেন, যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ভিটামিন ‘বি’ এবং ‘সি’ জাতীয় খাবার

এই ভিটামিনগুলো পানির সাথে মিশে যায়। এগুলো শরীরে জমা হয়না। চিকিৎসক কল্লোলের মতে, প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

এই ভিটামিনগুলো পানিতে মিশে যাওয়ার কারণে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।

শরীরের নার্ভ-এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই দুই ধরণের ভিটামিন কাজ করে।

শরীরের ভেতরে বিক্রিয়ার কারণে যেসব সেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো সারিয়ে তুলতে কাজ করে ভিটামিন সি।

দুধ এবং কলিজার মধ্যে ভিটামিন বি আছে। টক জাতীয় যে কোন ধরণের ফল- লেবু, আমলকী, কমলা, বাতাবিলেবু এবং পেয়ারাতে ভিটামিন সি আছে।

চা-কফি কতটা খাবেন?

অতিমাত্রায় চা-কফি পান করা শরীরের জন্য ভালো নয় বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসক মি: কল্লোল।

“ধরুন একজন ব্যক্তি যদি দিনে সাত কাপ চা খায়, এবং প্রতি কাপে এক চামচ চিনি থাকে তাহলে তিনি কিন্তু প্রতিদিন সাত চামচ চিনি খাচ্ছেন। এই সাত চামচ চিনি শরীরের জন্য ভয়াবহ।” বলছিলেন মি: কল্লোল।

চা-কফিতে এমন অনেক উপাদান থাকে যার কোনটি শরীরের জন্য ভালো এবং কোনটি শরীরের জন্য খারাপ।

ভাত বেশি খাবেন না

একজন মানুষ প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খাবেন, তার ৬০ শতাংশ হওয়া উচিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।

এর পর ৩০ শতাংশ হতে হবে প্রোটিন এবং ৫ শতাংশের মতো থাকবে চর্বিজাতীয় খাবার।

মি: কল্লোল বলেন, “আমাদের দেশে দেখা যায়, শর্করা প্রচুর খাওয়া হচ্ছে কিন্তু সে পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা হয়না।”

তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে সেটি শরীরের ভেতরে ঢোকার পর ফ্যাট বা চর্বিতে রূপান্তর ঘটে।

অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবার সুষমভাবে খেতে হবে।

“আপনি হয়তো মনে করছেন যে আপনি প্রচুর পরিমাণে তেল, চর্বি, ঘি বা মাখন জাতীয় খাবার খাচ্ছি না। তাহলে আমার শরীরে এতো চর্বি জমা হয় কীভাবে?”

নিয়মিত ব্যায়াম অথবা অন্য যে কোন ধরণের শারীরিক পরিশ্রম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে।

শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছবে। তখন শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন শুরু হবে।

সুতরাং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমের সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। মি: কল্লোল বলেন, এমন ধরণের পরিশ্রম করতে হবে যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রেহাই মিলবে?

চিকিৎসক মি: কল্লোল বলেন, এর সাথে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া কিংবা না হওয়ার সম্পর্ক আছে কিনা সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। একজনের শরীরে কতটুকু জীবাণু ঢুকছে এবং সে জীবাণুটির আক্রান্ত করার ক্ষমতা কতটা সেটি গুরুত্বপূর্ণ।

“ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। সে ভাইরাস যখন আমার শরীরে ঢুকছে, তখন আমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম অ্যাকটিভেট (কার্যকরী) হচ্ছে সাথে-সাথে। তখন আমার শরীর সাথে-সাথে সেটির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সুতরাং যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, এবং যে মশাটি কামড়াচ্ছে সেটির ভেতরে যদি জীবাণুর পরিমাণ কম হয়, সেক্ষেত্রে আমার শরীর ভালো রিঅ্যাক্ট (সাড়া) করবে।”

সুত্র ঃ বিবিসি

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *