তেজস্ক্রিয় বিকিরণে নির্মূল হবে ডেঙ্গু

তেজস্ক্রিয় বিকিরণে মশা হবে বন্ধ্যা নির্মূল হবে ডেঙ্গু। শুনতে একটু অবাক লাগলেও দেশের একদল বিজ্ঞানী মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন এই পদ্ধতি রপ্ত করেছে। প্রায় যুগের কাছাকাছি গবেষণায় পুরুষ এডিস মশাকে স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিকের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী দল। সাভারে পরমাণু শক্তি কমিশনের গবেষণাগারে প্রতিব্যাচে ৮০০ করে এডিস মশা নেয়া হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। দারুণভাবে সফল হওয়া এই প্রক্রিয়া আগামী বছর সীমিত আকারে ছড়িয়ে দেয়া হবে মাঠ পর্যায়ে।

পরমাণু শক্তি কমিশন ২০০৮ সালে এই কাজ শুরু করে। আর এখন চলছে ২০১৯। এক যুগের কাছাকাছি সময়ের এই গবেষণায় সাফল্যের কথাই জানালেন বিজ্ঞানীরা। বুধবার বিকেলে ডেঙ্গু সচেতনতা ও প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পরমাণু শক্তি কমিশন। সেখানেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণে দেশীয় বিজ্ঞানীদের সাফল্য তুলে ধরা হয়। যদিও বিশ^ব্যাপী এই প্রক্রিয়া আরও আগেই শুরু হয়েছে। চীন তাদের দেশের মশা নিয়ন্ত্রণে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেয়া মশা বিভিন্ন স্থানে ছাড়ছে। তবে এখনও বিশে^ সীমিত আকারেই চলছে এই কার্যক্রম।

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হচ্ছে, প্রকৃতিতে স্ত্রী মশাও থাকে আবার পুরুষ মশাও থাকে। এরমধ্যে স্ত্রী মশাই রোগ বহন করে, স্ত্রী মশাই কামড়ায়। প্রথমে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দিয়ে পুরুষ মশাকে বন্ধ্যা করে ফেলা হয়। এটা পুরুষ মশার স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দেয়। পুরুষ মশাটা বন্ধ্যা হয়ে যায়। এরপর সে যখন স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত নয় তখন স্ত্রী মশা ডিম পাড়ে কিন্তু সেই ডিম থেকে আর কোন বাচ্চা ফোটে না। এভাবে যে এক ব্যাচ মশা নিয়ে কাজ করা হয় ওই এক ব্যাচ থেকে আর মশার বাচ্চা পাওয়া যায় না। এভাবে কোন একটি এলাকায় বিপুলভাবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেয়া মশা ছড়িয়ে দিলে বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজলা সেহেলী বলেন, এটা করতে হলে গবেষণাগার পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। আমরা এখন সেই পর্যায়ে রয়েছি। আস্তে আস্তে আমরা এটি প্রয়োগ শুরু করব। প্রথমে হয়ত গবেষণাগার থেকে বের হয়ে আরও একটি বড় পরিসর এর পর হয়ত কোন একটি এলাকায় এ ধরনের মশা ছাড়া হবে। এরপর হয়ত অনেক বড় এলাকায় যাওয়া সম্ভব হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া কিছুটা সময় লাগলেও এই প্রক্রিয়া মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মশাগুলোকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দিলে মশা যে সত্যি সত্যি প্রকৃতিতে টিকতে পারবে কিনা সে বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে। মশাকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেয়া হলে মশাটি সত্যি সত্যি প্রকৃতিতে টিকে থাকার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পায় কিনা তা আমাদের দেখতে হচ্ছে। প্রকৃতিকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেয়া মশা ছাড়ার পরে প্রকৃতিতেও তো পুরুষ মশা রয়েছে। সঙ্গত কারণে তারাও তো স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হতে চাইবে। সে জন্যই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেয়া মশাগুলোকে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মশা একটি প্রকৃতির জিনিস। এটিকে গবেষণাগারে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরুর সময়টি ব্যয় হয়েছে। এরপর দেখা গেছে, ৮০ গ্রে মাত্রার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দিলে মশা বন্ধ্যা হচ্ছে। এভাবে গবেষণাগারে প্রতিবার গবেষণার জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ মশাকে রেডিয়েশন দেয়া হচ্ছে। তবে যেহেতু গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে তাই সব সময় সফলতা আসে না। সাভারে পরমাণু শক্তি কমিশনের কার্যালয়ের মধ্যে একদল গবেষক মশা নিয়ে এই গবেষণা শুরু করে। স্থায়ীভাবে মশার হাত থেকে মুক্তির জন্যই এই প্রক্রিয়া বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে এডিস মশা নির্মূল করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীদের গবেষণা সফল করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের জন্য যার যার অবস্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। সবাইকে এক সঙ্গে এটি প্রতিরোধ করার জন্য জানান তিনি। তিনি সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের আহ্বান জানান।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *